মৌলভীবাজার সংবাদদাতা
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার সাতগাঁও চা বাগানের এসিস্টেন্ট ম্যানেজারের বাংলোতে ডাকাতির ঘটনায় মালামালসহ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জেলা পুলিশ আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রেসব্রিফিং এর মাধ্যমে পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান পিপিএম (বার) জানান।
প্রেসব্রিফিং কালে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) সুদর্শন কুমার রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহসিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোহাম্মদ সারোআর আলম, সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আনিসুর রহমান, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, মামলার তদন্তকারী অফিসার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। তিনি জানান, ২৩ নভেম্বর দিনব্যাপি কুমিল্লা জেলার কোতায়ালী থানা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সবুজ মিয়া (৪৭), বশির আহমদ (৩৫), সফিক উদ্দিন (৪০) এবং মিঠুন দাস (২৫) নামে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে মৌলভীবাজার জেলার সাতগাঁও চা বাগানের বাংলো থেকে লুটকৃত স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা এবং অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।
ডাকাতির সংবাদ পাওয়া মাত্রই শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে থানা পুলিশ মাঠে কাজ শুরু করে। ডাকাতির ঘটনার রহস্য উদঘাটন, আসামিদের গ্রেফতার এবং লুষ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আমিনুল ইসলাম এবং শ্রীমঙ্গল থানার একটি চৌকস দল অভিযান শুরু করে। গোপন সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালী থানার অন্তর্গত ২নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের হাজী মোস্তফার মালিকানাধীন বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ৩ জন সাতগাঁও চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপকের বাংলোতে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত মর্মে স্বীকার করে।
গ্রেফতাকৃত আসামি সবুজ মিয়ার কাছ থেকে ডাকাতির ঘটনায় লুষ্ঠিত ৮ (আট) আনা ওজনের ১টি স্বর্ণের চেইন ও নগদ ৩হাজার টাকা, বশির আহমদের কাছ থেকে ডাকাতির ঘটনায় লুষ্ঠিত ২ আনা ওজনের ১টি স্বর্ণের আংটি, ১টি সিলভার রংয়ের নেভিফোর্স ব্রান্ডের হাত ঘড়ি ও নগদ ৩ হাজার টাকা এবং সফিক উদ্দিনের কাছ থেকে ডাকাতির ঘটনায় লুন্ঠিত ১টি গোল্ডেন কালারের মিমা ব্রান্ডের হাত ঘড়ি ও নগদ ৩ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
পরবর্তীতে গ্রেফতাকৃত আসামিরা জানায়, ডাকাতির ঘটনায় লুষ্ঠিত স্বর্ণালংকার ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত নাসিরনগর থানাধীন ধরমন্ডল বাজারে শুভা শিল্পালয় নামক জুয়েলারী দোকানে বিক্রি করেছেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির ঘটনায় লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারের লক্ষ্যে গ্রেফতারকৃত আসামীগনসহ নাসিরনগর থানাধীন ধরমন্ডল বাজারস্থ শুভা শিল্পালয় নামক জুয়েলারী দোকানে অভিযান পরিচালনা করে দোকান মালিক স্বর্ণালংকার ক্রয়কারী মুজিবর রহমান (৪৫) পালিয়ে যায়। এসময় তার সহযোগী দোকান কর্মচারী মিঠুন দাস (২৫) কে আটক করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের দেওয়া তথ্য এবং তাদের সনাক্তমতে আটককৃত মিঠুন দাসকে লুন্ঠিত স্বর্ণালংকারের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে আসামীদের কাছ থেকে ডাকাতির ঘটনায় লুণ্ঠিত স্বর্ণ ক্রয়ের কথা স্বীকার করে। পরে সেখান থেকে ১টি সাদা রংয়ের কাগজের প্যাকেটে রক্ষিত অবস্থায় ৮ আনা ওজনের ১টি স্বর্ণের চেইন, ২ আনা ওজনের ১ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, ২ আনা ওজনের ১ জোড়া স্বর্ণের কানের রিং জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীগন আন্তঃ জেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাতগাঁও চা বাগানে সহকারী ব্যবস্থাপকের বাংলোতে ডাকাতির ঘটনার জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকার করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২২ নভেম্বর রাত দেরটা হতে ৩ টা পর্যন্ত মুখোশ পরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একটি ডাকাতদল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও চা বাগানের এসিস্টেন্ট ম্যানজোর আব্দুল মতিনের বাংলোতে প্রবেশ করে আব্দুল মতিন এবং তার স্ত্রী ও অন্য সদস্যদরে হাত-পা বেঁধে ৫ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ৮০ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য মালামাল লুট করে। এ ঘটনায় ২২ নভেম্বর শ্রীমঙ্গল থানায় একটি ডাকাতি মামলা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন- হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার ফান্দ্ররাইল গ্রামের (পান্ডরাইল) মোঃ খোরশেদ আলীর ছেলে সবুজ মিয়া (৪৭), সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারা বাজার থানার রামপুর গ্রামের মৃত জুনাব আলীর ছেলে বশির আহমদ (৩৫), সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার লাকেশ্বর পূর্বপাড়া গ্রামের আলতাবুর রহমানের ছেলে সফিক উদ্দিন (৪০) ও নাসিরনগর থানার কান্দুরা সাহেব বাড়ির মনিন্দ্র সরকারের ছেলে মিঠুন দাস (২৫)।