বালুচরে ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যার ঘটনায় দুই জন গ্রেফতার

12

স্টাফ রিপোর্টার
নগরীর বালুচর এলাকায় এক ছাত্রলীগ কর্মীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার রাত ১২টার দিকে টিভি গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ছাত্রলীগকর্মী আরিফ (১৯) নগরীর টিভি গেইট এলাকার ফটিক মিয়ার ছেলে। নিহত আরিফ ছাত্রলীগ সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি নাজমুল ইসলাম গ্রæপের সক্রিয় কর্মী বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় নগরীর পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- বাচ্চু মিয়ার ছেলে রনি (২১) ও কামাল মিয়ার ছেলে মামুন মজুমদার (২৮)। তারা দুজনেই সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিরন মাহমুদ নিপু গ্রæপের কর্মী। গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) এর উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেট নগরীর বালুচরে ছাত্রলীগের বিবদমান দুটো গ্রæপের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জেরে রাত ১২টার দিকে আরিফকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন রাত দেড়টার দিকে তিনি মারা যান।
শরীরে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাত ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই ছাত্রলীগ কর্মী আরিফের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম। নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার দুপুরে তিনি এ তথ্য জানান।
শামসুল ইসলাম বলেন, নিহত আরিফের শরীরে মোট ২৩টি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২০টি আঘাত নতুন ও তিনটি আঘাতের চিহ্ন দুই-তিনদিন আগের। দুই-তিনদিন আগেও তাকে মারা হয়েছিলো সেখানে ৩টি আঘাত রয়েছে। যা ব্যান্ডেজ দেয়া ছিলো বলে তিনি জানান। এদিকে, ময়না তদন্ত শেষে মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে ছাত্রলীগ কর্মী আরিফের লাশ তার মায়ের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতের জানাযা শেষে বাদ আসর নগরীর মানিকপির কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে তার পারিবারিক সুত্র জানা গেছে।
অপরদিকে, ঘটনার রাতেই নিহত আরিফকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ।
ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, নিহত আরিফ সিলেট স্টেট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী। চার-পাঁচদিন আগে আরিফের ওপর হামলা করেছিল এলাকার কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী। সোমবার বিকেলে আরিফ হামলার ঘটনায় এসএমপি শাহপরান থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। সেখান থেকে ফেরার সময় তার ওপর হামলা চালানো হয়।
নিহত আরিফ আহমদ পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। রাজনীতিতে জড়ানোর পর পরই দেখা দেয় আরিফের প্রতিপক্ষ। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাকে ঘায়েল করার জন্য নিজ দলেরই নেতাকর্মীরা নেন পরিকল্পনা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ নভেম্বর শাহপরাণ থানার উত্তর বালুচর এলাকায় রাতে তার উপর হামলা করে ছাত্রলীগের একটি গ্রæপ। এ সময় তাকে বেধড়ক মারধরের পাশাপাশি ধারালো অস্ত্র দিয়েও আঘাত করে হামলাকারীরা। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় হাসপাতালে। গত রবিবার ১৯ নভেম্বর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান আরিফ। ছেলের ওপর হামলার ঘটনায় আরিফের মা আঁখি বেগম ছয় জনের নামে মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানায় অভিযোগ দেন। থানায় করা অভিযোগে যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- বালুচর এলাকার জুনেদ, আনাছ মিয়া, কুদরত আলী, কালা মামুন, শরীফ, হেলাল ও সবুজ মিয়া।
অভিযোগে আরিফের মা উল্লেখ করেন, আসামিরা পরিকল্পিতভাবে গত ১৫ নভেম্বর রাতে বালুচর এলাকার ২নং মসজিদের সামনে আমার ছেলে আরিফ আহমদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা মারধরের পাশাপাশি তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়েও আঘাত করে। আসামি আনাছ মিয়ার ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আমার ছেলের একটি আঙুল কেটে পড়ে যায়। এ সময় আনাছ মিয়া, কুদরত আলী ও জুনেদ আমার ছেলেকে কুপিয়ে জখম করে। এ ছাড়া আসামি শরীফ আমার ছেলেকে ধরে রাখলে সবুজ ও হেলাল বেধড়ক মারধর করা শুরু করে। স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
আরিফের মা আখি বেগম আরো বলেন, আমার ছেলেকে যারা প্রথমে মারপিঠ করেছিলো হত্যা করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করায় আমার ছেলেকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আমি ন্যায় বিচার পাইনি। ন্যায় বিচার যদি পেতাম তাহলে আমার ছেলেকে প্রাণ দিতে হতো না।
সিলেট এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মঈন উদ্দিন সিপন জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাÐ ঘটেছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। নিহত আরিফের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।