নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের চলমান মতবিরোধের মধ্যে গত বুধবার সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। এ সময় তিনি সংবিধান ও আইনের আলোকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহŸান জানান। তফসিল ঘোষণার পর দৃশ্যত যাত্রা শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী ট্রেনের। এমন এক সময় সিইসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেন যখন সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো আন্দোলনে রয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার অবস্থানে অনড়। অতীতে আমরা দেখেছি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ছাড়া নির্বাচন অংশগ্রহণ হয়নি। এতে সংঘাত সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। এমনিতেই এক মাস ধরে বিরোধী দল বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো সারাদেশে জ¦ালাও-পোড়াও করছে। দেশের মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছে। তফসিল ঘোষণার পর বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সারাদেশে ১২টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। নির্বাচনকে ঘিরে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে বিএনপি-জামায়াত। অবরোধের নামে সারাদেশে নাশকতা চালাচ্ছে। প্রতিদিন যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ নানা নৈরাজ্যের খবর গণমাধ্যমে আসছে। যেভাবে সারাদেশে বাস পোড়ানো হচ্ছে তা আমাদের যেমন উদ্বিগ্ন করেছে তেমনই বিস্মিত করেছে। অবরোধের নামে মানুষ হত্যা, অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি-জামায়াত হিংস্র মনোবৃত্তির পুনঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করে কি কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনের কৌশল বা উপাদান হতে পারে? সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। মানুষকে চলাফেরা করতে হচ্ছে প্রাণ হাতে নিয়ে। স্বাধীনতা বিরোধীদের মাঠে নিয়ে আবারো হত্যার খেলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা শুরু করেছে। সাধারণ জনগণ এমন কর্মকাÐ কখনো সমর্থন করে না। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্র জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি শুরু করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যখন বিচার শুরু হয় তখনই এই ধ্বংসাত্মক রাজনীতি শুরু হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বিরোধিতা করে বিএনপি জোটের ভয়াবহ সন্ত্রাসের রাজত্ব কেউ ভোলেনি। তখন শত শত যানবাহন পুড়িয়ে দেয়া হয়। পেট্রোল বোমার আঘাতে দগ্ধ মানুষের আহাজারিতে হাসপাতালগুলোর বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। পবিত্র উপাসনালয় মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জায়ও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি লাখ লাখ গাছও। নির্বাচনের দিন প্রিসাইডিং অফিসারসহ হত্যা করা হয় ২৬ জন নিরীহ মানুষকে। সারাদেশে ৫৮২টি ভোটকেন্দ্রে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত জোট আগুনসন্ত্রাসের খেলায় মেতে উঠেছে। নাশকতা-নৃশংসতা কোনো রাজনৈতিক আচরণ নয়, নিজেদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করতে হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পন্থায়। ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এবারো নির্বাচন বর্জন করলে দীর্ঘদিন বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে থাকতে হবে। জনসমর্থন ও কর্মী হারাবে দলটি। একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি, সেই সংসদের মেয়াদ আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সাংবিধানিক ধারা অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করেছেন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক দায়িত্ব। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলেও, সমঝোতার সম্ভাবনা ফুরিয়ে যায়নি। এখনো চাইলে রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে বসে সমঝোতায় আসতে পারে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব বেশি। সর্বোপরি, দেশের কল্যাণে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনমুখী হবে- এমনই প্রত্যাশা করছি।