করোনা মহামারির পর চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিতে বাধা সৃষ্টি করেছে। দেড় বছরের বেশি সময় দেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশের অর্থনীতির সূচকগুলোয় অস্থিরতা বিরাজ করছে। রেমিট্যান্স প্রবাহে মন্দা কাটছে না; মার্কিন ডলারের সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশের রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতি। রাজনৈতিক দলগুলোর মহাসমাবেশ, রাজনৈতিক সহিংসতা, পালটাপালটি কর্মসূচি, ধরপাকড়, গ্রেফতার, অগ্নিসংযোগ ও জনদুর্ভোগ নতুন করে দেশের অর্থনীতিতে শঙ্কা তৈরি করেছে। এ অবস্থায় দেশে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, আমদানি-রপ্তানিসহ বিভিন্ন খাতে ঝুঁকি বাড়বে, এমনটাই শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
মূল্যস্ফীতির ভয়াবহ চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। উ™‚¢ত পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক সংকট লাঘবে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে, তাতে অর্থনীতিতেও নানামুখী আঘাত আসতে পারে। দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি আমদানি-রপ্তানি খাত। এমনিতেই নানা ঝুঁকির মধ্যে আছে আমাদের রপ্তানি খাত। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এ খাতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে ঝুঁকি বাড়তে পারে। আমদানি-রপ্তানি খাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। উৎপাদনের সঙ্গে কর্মসংস্থানের বিষয়টি সরাসরি জড়িত। দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে বেকারের সংখ্যাও বাড়বে। উ™‚¢ত পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি নিয়েও মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার বিকল্প নেই।
অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, চলমান রাজনীতির সমাধান অহিংস পথে নাকি সংঘাতের মাধ্যমে ফয়সালা হবে, তার ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ মূল্যস্ফীতির চাপ নির্দিষ্ট বা বাঁধা আয়ের মানুষের ওপর আরও কত দুর্বিষহ হয়ে উঠবে, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি কতখানি ধরে রাখা যাবে এবং আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে আদৌ এগোতে পারব কি না-এসব বিষয়। বস্তুত দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মাত্রা বাড়লে কর্মসংস্থানের সংকট বাড়বে; আয় কমবে। এতে অর্থনীতিতে স্থবিরতা সৃষ্টি হবে; যা জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়াবে। এক বছরেরও বেশি সময় মূল্যস্ফীতির কারণে গরিব মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হলে বিদেশিরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি বহু ক্রেতা আমাদের অর্ডার বাতিল করে দিয়েছিলেন। এমনিতেই তৈরি পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্ডার কম আসছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বা অস্থিরতা শুরু হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। দেশের অর্থনীতিতে যাতে চাপ আর না বাড়ে, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। আলোচনার পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।