দেশে ক্রমাগত উন্নয়ন হচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অগ্রগতির বিষয়টি নানাভাবেই স্পষ্ট। কিন্তু এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যদি বৈষম্য বাড়তে থাকে, বিশেষ করে সম্পদ ও ভোগের ক্ষেত্রে, তবে তা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, বিগত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা ও পরিসংখ্যানে বাংলাদেশে দৃশ্যমান উন্নয়নের পাশাপাশি বৈষম্য বেড়েছে। আর এই বৈষম্য শুধু সম্পদ কিংবা অর্থেরই নয়, এখানে ভোগ বৈষম্যও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায্যতার লক্ষ্যে নাগরিক এজেন্ডা: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সামাজিক সুরক্ষা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এই বিষয়গুলো উঠে আসে।
আমরা বলতে চাই, যদি বৈষম্য শুধু সম্পদ কিংবা অর্থ ছাড়াও যখন ভোগের ক্ষেত্রেও বাড়ছে তবে তা আমলে নেওয়া জরুরি। সার্বিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করা। বলা দরকার, যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়- যেখানে সমাজে সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে তবে তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে এটাও উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে এটাও সামনে এসেছে, গত জুন শেষে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪ জনে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, গত মার্চ শেষে এ সংখ্যা ছিল এক লাখ ১০ হাজার ১৯২ জন। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে বৈষম্যর বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং এক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনে সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, ব্রিফিংয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক পস্ন্যাটফর্মের আহŸায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশে দৃশ্যমান উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা এগিয়েছি, সন্দেহ নেই। যে মানুষ বিপন্ন অবস্থায় আছে, তাদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছতে না পারা এবং উন্নয়নের মধ্যে ন্যায্যতা আনার বিষয়টি তিনি আলোচনায় আনেন। পিছিয়ে পড়া মানুষের হিস্যাকে সামনে আনার বিষয়টি উলেস্নখ করেন। ড.?? দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এটাও বলেছেন, ‘বৈষম্যের ফলে কিছু মানুষ ধারাবাহিকভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। এসব মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সরকারের বিভিন্ন সহযোগিতা সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও অগ্রগামী হতে পারেনি। এটাই বাস্তবতা।’
আমরা বলতে চাই, এই বিষয়গুলোকে আমলে নেওয়া এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। স্মর্তব্য যে, এর আগে এই বিষয়ও বারবার আলোচনায় এসেছে- এ দেশের এক শ্রেণির অসৎ ও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে জীবন ধারণ কিংবা ভোগের ক্ষেত্রে ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হয় অল্প আয়ের মানুষের। অথচ জনগণকে বারবার দুর্ভোগ ও অসহায়ত্বে ফেলে দেয়া ন্যায়সঙ্গত কাজ নয়। ফলে এ কথাও বলা দরকার, সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য আনার জন্য বন্ধ করতে হবে আর্থিক পরিমন্ডলে দুর্বৃত্তায়নের প্রবণতাও। একটি বিকাশমান অর্থনীতিকে পরিচালনা ও অগ্রসরমাণ করতে হলে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি একইসঙ্গে এর বিকল্প নেই। আমরা বলতে চাই, দেশ এগিয়েছে, নানা ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। শিক্ষা বিস্তৃত হচ্ছে। ফলে এসবের পাশাপাশি বৈষম্য নিরসনেও কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। অর্থনীতির বিকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। কেননা, এটা সম্ভব না হলে অর্থনৈতিক বৈষম্য আরো বাড়বে- আর এমন আলোচনায় নানা সময়েই সামনে এসেছে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সমাজে বৈষম্য বাড়লে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সর্বত্র- যা কাম্য হতে পারে না। আর অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে নানা ধরনের সংকট তৈরি হয়। ফলে যে বিষয়টি সামনে আসছে, বিগত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা ও পরিসংখ্যানে বাংলাদেশে দৃশ্যমান উন্নয়নের পাশাপাশি বৈষম্যও বেড়েছে- এটি আমলে নিন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে বৈষম্য নিরসনে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি প্রত্যাশিত।