মানব পাচার বন্ধে সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি

60

 

সরকারের নানা ধরনের উদ্যোগ ও তৎপরতা সত্তে¡ও মানব পাচার কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। নানাভাবে মানব পাচার হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতে অবৈধ পথে পাচার হওয়া ১৯ জন বাংলাদেশি নারী-পুরুষকে দীর্ঘ চার বছর পর যশোরের বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফেরত দিয়েছে ভারতীয় পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বদেশ প্রত্যাবাসন আইনে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে হস্তান্তর করে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের তিনটি এনজিও সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে পুলিশ। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের বাড়ি যশোর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় পুলিশের হাতে আটকের পর ফেরত আসা বাংলাদেশিরা ভারতের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। তারা ভালো কাজের প্রলোভনে পড়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পথে দালালের মাধ্যমে ভারতে গিয়েছিলেন। পরে দালালরা তাদের দেওয়া কথা না রেখে নানান ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বাধ্য করেন। এ সময় কেউ জীবন বাঁচাতে স্বেচ্ছায় পুলিশের হাতে ধরা দেন, আবার কেউ কেউ অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে পুলিশের কাছে আটক হন। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাচার হওয়া এসব নারী-পুরুষকে তাদের নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বাংলাদেশ থেকে ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল, সাইপ্রাস, স্পেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, ওমান, কাতার, ইরাক ও লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের বেশি পাচার করা হয়। বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারকারীরা অন্তত ১৮টি রুট ব্যবহার করে। তারা বিভিন্ন দেশে বসে এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। জানা গেছে, দালাল ও তাদের সহযোগীদের বিদেশে লোক পাঠানোর বৈধ লাইসেন্স নেই। প্রশাসনের নজরদারি ও স্থানীয় মানুষের সচেতনতার অভাবে দালালরা বিদেশে পাঠানোর নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ইউরোপের কোনো দেশে পাঠাতে একেকজনের কাছে থেকে নেওয়া হয় ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রধান টার্গেট এলাকার বেকার যুবক। টাকা নিয়ে প্রথমে তাদের ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠানো হয়। সেখানে দালাল চক্রের আরেক গ্রম্নপ তাদের দু-তিন দিন দুবাইয়ে রাখে। সেখান থেকে চার্টার্ড বিমানে পাঠানো হয় লিবিয়ায়। সুবিধামতো সময়ে দালালরা নৌকা বা ট্রলারে করে তাদের ইতালির উদ্দেশে পাঠিয়ে দেয়। ভাগ্যক্রমে দুই-একজন ইতালিতে যেতে পারলেও বেশির ভাগই সাগরে নিখোঁজ হন বা মারা যান। এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দালাল ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে, এর পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে।
মনে রাখতে হবে, মানব পাচার বাংলাদেশের অন্যতম শিরঃপীড়ায় পরিণত হয়েছে। জল-স্থল-আকাশপথে প্রতিদিন মানব পাচার চলছে। মূলত জীবন ও জীবিকার কারণে, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যের পীড়নে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। এসব মানুষের বেশির ভাগই প্রতারিত হচ্ছে, হচ্ছে সর্বস্বান্ত। অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাপথে মারা যাচ্ছে।
আমরা মনে করি, মানব পাচার ঠেকাতে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ পদক্ষেপ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে পাচারকারীদের শনাক্ত ও অভিযান পরিচালনা করতে হবে। মানব পাচার বন্ধ করতে সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি।