এমএম ইলিয়াছ আলী, শান্তিগঞ্জ থেকে
সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের বহু পুরাতন বাজার হচ্ছে পাগলা বাজার। বাজারের উত্তর প্রান্তে মহানিং নদী। এনদী পাড়ি দিয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে গ্রামবাসী সহ স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী প্রতি নিয়ত আসতে হয় এপারড়ে।
ঐ পাড়ে রয়েছে পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের কাদিপুর গ্রাম। তার পাশে আছে জয়কলস ইউনিয়নের আসামপুর এবং পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের বাদুল্লাপুর ও শরিয়তপুর গ্রাম। ব্রিটশ আমল থেকেই পাগলা বাজার থেকে এই গ্রাম গুলোকে পৃথক করে রেখেছে মহানিং নদী। দুই ইউনিয়নের এই তিনটি সহ চিকারকান্দি, রনসী গ্রমের মানুষ নৌকা যোগে পাগলা বাজারে আদিকাল থেকে যাতায়াত করতেন। এখনও এই এলাকার মানুষজন পাগলা বাজার হয়েইে যাতায়ত করেন ও এই বাজারেই কেনাকাটা করেন। মহাসিং নদীতে ব্রিজ না থাকায় চরম দুর্ভোগে চলাচল ও জীবনযাপন করছেন তারা। চলাচলের একমাত্র ভরশা এখন খেয়া নৌকা। এলাকার অসুস্থ রোগী থেকে শুরু করে, বয়োজষ্ঠ্য সহ সবাই জীবনের ঝুকি নিয়ে খেয়া নৌকাই একমাত্র ভরসা সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাগলা বাজারের উত্তরপ্রান্তে বিশাল মাছ বাজার রয়েছে। পাশেই মহাসিং নদী। নদীতে অসংখ্য ছোট-ছোট নৌকা। এই নৌকা যোগেই যাতায়াত করছেন, কাদিপুর ও আসামপুর গ্রামের মানুষ। তার সাথে যাতায়াত করছেন, বাদুল্লাপুর, রনসী, চিকারকান্দি গ্রামের মানুষও। ইন্জিন চালিত ছোট্ট নৈকার পাশা-পাশি রাখা হয়েছে এপাড় ওপাড় করার জন্য আরেকটি খেয়া নৌকা। এই নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন কাদিপুর ও আশ-পাশের মানুষজন। দেখার হাওড় থেকে বিভিন্ন এলাকার জেলেরাও ছোট-ছোট মাছ ধরার নৌকায় করে পাগলা বাজারে আসছেন মাছ বিক্রি করার জন্য। তবে দিনের বেলা এই নৌ-যোগাযোগ থাকলেও রাতের বেলায় কোন নৌকা বা খেয়া নৌকা থাকে না। রাতে এই এলাকার কেউ অসুস্থ হলে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়তে হয় এই এলাকার মানুষের।
কাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল হক জানান, জন্মেরপর থেকেই আমরা খুব কষ্ট করে যাতায়াত করছি। আমাদের বাবা-দাদারাও এই কষ্ট করে গেছেন। এখন ডিজিটাল যোগে এসেও আমাদের কষ্টের কোন সমাধান হয়নি। আমাদের বলার কিছু নাই। আমাদের ছেলে মেয়েরা ঠিকমত স্কুল কলেজে যাতায়াত করতে পারে না। রাতে কেউ অসুস্থ হলে এই রোগীকে দ্রæত হাসপাতালে নেওয়া যায় না। সকালের অপেক্ষা করতে হয়। এরই মাধ্যে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। কেউ কেউ মারাও যান। এভাবেই আমাদের জীবন চলছে।
কাদিপুর গ্রামের সুজেরা বেগম জানান, আমাদের ছেলে-মেয়েরা ঠিক সময়ে স্কুলে যেতে পারে না। আমাদের খুব কষ্ট করে খেয়া নৌকা দিয়ে নদী পারাপার করতে হয়। একজন মেহমান আমাদের গ্রামে আসতে হয়ে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সেই সাথে কোন র্গর্ভবতী মহিলার ডেলিভারি সময় হলো দ্রæত হাসপাতালে নেওয়া যায় না। আমরা এই নদীতে একটি ব্রিজ চাই। আমাদের নদীর মধ্যে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে আমাদের ভাগ্যের পরির্বতন হতো।
কাদিুপর গ্রামের সমাজসেবী সৈয়দুর রহমান সৈয়দ জানান, এই নদীতে এইটি সেতু খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মানুষ যেভাবে স্বপ্ন দেখেছিল পদ্মা সেতুর, তেমনি আমরা এই এলাকার মানুষ হিসাবে আমাদের মাহাসিং নদীর পাগলা-কাদিপুর অংশে স্বপ্ন দেখি একটি সেতুর। আর এই স্বপ্নটি দেখিয়েছিলেন আমাদের এলাকার পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। তিনি আমাদেরকে প্রথম থেকেই বলে আসছেন আমাদের মহাসিং নদীতে সেতু করে দিবেন। আমাদের একটাই দাবি আমরা পাগলা-কাদিপুরে এই সেতুটির বাস্তবায়ন চাই। মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি মহোদয়ের কাছে আমাদের এলকাবাসীর জোর দাবি এই ব্রিজটি যেন দ্রæত বাস্তবায়ন করেন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আল-নুর তারেক জানান, এই ব্রিজ নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান আছে। আমরা সার্ভে করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে আরেকটি টিম ব্রিজটির স্টিমেট তৈরি করবেন। এর পরে এই ব্রিজের টেন্ডার আহŸান করা হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে আশা করি খুব শীগ্রই এই ব্রিজটির কাজ শুরু করতে পারবো।