অর্থ পাচার রোধ করতে হবে

7

কোনোভাবেই অর্থ পাচার রোধ করা যাচ্ছে না। নানাভাবে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। তৈরি পোশাক রপ্তানির আড়ালে গত ৫ বছরে ১৪টি প্রতিষ্ঠান অন্তত ৬৮২ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সহায়তায় জাল কাগজপত্র বানিয়ে পণ্যবোঝাই শত শত কনটেইনার মধ্যপ্রাচ্যসহ ২৮টি দেশের অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি করে। প্রতিষ্ঠানগুলো বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতি এবং অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ই-এক্সপি ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে এসব পণ্য রপ্তানি করে। কিন্তু পণ্যগুলোর বিপরীতে প্রযোজ্য বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসেনি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এমনকি কাস্টমস কর্তৃপক্ষও কোনো প্রশ্ন তোলেনি, কারো বিরুদ্ধে তদন্তও হয়নি। তবে সম্প্রতি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে। সংস্থাটি গত সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ পর্যন্ত অর্থ পাচার রোধে যত কথা হয়েছে, সে অনুপাতে কি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? হয়নি। অর্থ পাচার রোধ কঠিন বিষয় নয়। সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সব বিভাগেরই যদি সমতৎপরতা থাকে এটি রোধ করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গেøাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অর্থ পাচারের পরিমাণ বাড়ছে। গত ছয় বছরে (২০০৯-১৫) বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা বা ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার। এই হিসাবে গড়ে প্রতি বছর পাচার হয়েছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। পাচার হওয়া এই অর্থের পরিমাণ একই সঙ্গে আতঙ্ক এবং উদ্বেগের। কারণ যে পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে, তার বড় উৎস দুর্নীতি। দুর্নীতি ছাড়া এ পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হয়নি। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি, কিন্তু সেই উদ্দেশ্য কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ তৈরি করছে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ। বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আলাপ-আলোচনার কথাও শোনা যায় জোরেশোরে। কিন্তু কার্যত সেই উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। মাত্র একবার ২০০৭ সালে আমরা একটি ঘটনায় মাত্র ২১ কোটি টাকা ফেরত আনার কথা জেনেছি। এরপর এ ধরনের উদ্যোগ আর নেয়া হয়নি বা হলেও তার সফলতার খবর আমরা জানতে পারিনি। আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হব এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার আশা করছি। দেশে যে হারে দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে এবং এর মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, তাতে এসব লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে আবশ্যিকভাবেই কয়েকটি বিষয়ের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। গণতন্ত্র, সুশাসন, ন্যায়বিচার, বৈষম্য হ্রাস এবং বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, অথচ তা রোধ করা যাচ্ছে না, এটা কোনোভাবে বরদাশত করা যায় না। অর্থ পাচার রোধে অবশ্যই পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।