পণ্যমূল্যের লাগাম টানুন

3

 

একের পর এক পণ্যের বাজার অস্থির হচ্ছে। কেন অস্থির হচ্ছে, কারা অস্থির করছে তা দায়িত্বশীল মহলের অজানা নয়। তারপরও একেকটা পণ্যের দাম বাড়ছেই। কাঁচামরিচ, ডিম ও সবজির পরে এবার পেঁয়াজের বাজার অস্থির। ভারতের বর্ধিত শুল্কারোপের পেঁয়াজ দেশে আসার আগেই ব্যবসায়ীরা মূল্য বাড়িয়ে অস্থির করে তুলেছেন বাজার। দুদিনে আমদানি পর্যায়ে ১০ এবং খুচরায় কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত মূল্য বাড়ানো হয়। অতিমুনাফার লোভে অসাধু ব্যবসায়ীরা কাজটি করেছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। স্থলবন্দরগুলোর কাস্টমসের তথ্যমতে, ভারতের রপ্তানি শুল্ক বাড়ানোর কোনো পেঁয়াজ এখন পর্যন্ত দেশে প্রবেশ করেনি। মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতি সামাল দিতে দিনাজপুরে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অপরদিকে কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, চীন, জাপান, ইরান, মিসর, তুরস্কসহ যে কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আনতে চাইলে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯ আগস্ট ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে ভারত। অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমবর্ধমান দাম নিয়ন্ত্রণে একটি ব্যবস্থা হিসাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সংবাদের পরপর বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে অস্থিরতা দেখা দেয়। বাজারে পেঁয়াজের মূল্য দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা কেজি।
বেনাপোলের আমদানিকারক জান্নাত এন্টারপ্রাইজের মালিক আল মামুন জানান, সবশেষ ভারত থেকে ৩৮-৪৬ টাকায় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। বর্ধিত শুল্কারোপের পর পেঁয়াজ আমদানি করলে এর মূল্য পড়বে কেজিপ্রতি ৫৩ থেকে ৬৫ টাকা। অথচ পুরোনো আমদানিকৃত পেঁয়াজই বিক্রি হচ্ছে শত টাকা কেজি। প্রশ্ন উঠেছে বাজার মনিটরিং দুর্বল ব্যবস্থা নিয়েও। এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, মনিটরিং দুর্বল না। আসলে খোলাবাজার অর্থনীতি। সেখানে বাজার কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কাজেই ইচ্ছা করলেই বাজার মনিটরিং করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। বিষয়টি নির্ভর করছে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। আমরা কেন সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছি না। আসলে সিন্ডিকেট ভাঙা অনেক কঠিন। তবে পেঁয়াজের সেলফলাইফ বাড়াতে পারলে ভবিষ্যতে এ নিয়ে সমস্যা থাকবে না। রাজধানীর পাইকারি আড়ত শ্যামবাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা, যা দুই দিন আগে ৬০-৬৫ টাকা ছিল। বিদেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬৫ টাকা, যা আগে ছিল ৪৫-৫৫ টাকা। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। আর পাড়া-মহল্লার দোকানে ১০০ টাকা। দুই দিন আগেও ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটছে। আমরা সবদিকে অসহায়। পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা কীভাবে বাড়ে?
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে কেন বাড়ল, এ বিষয়ে দেখা হচ্ছে। যারা পণ্যমূল্যের বাজার অস্থির করছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে এ অবস্থা থাকবে না। যারা সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থির করছে তাদের আইনের আওতায় আনা হলে সংকট কেটে যাবে।