কে.এম লিমন, গোয়াইনঘাট থেকে
সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে দগ্ধ হয়ে মা ও মেয়ে নিহত এবং এ ঘটনায় একই পরিবারের আরও ৪ জন আহত হয়েছেন। রোববার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে উপজেলার জাফলংয়ের রসুলপুর গ্রামের ইয়াকুব মিয়ার দোকান ও বসতঘরে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ইয়াকুব মিয়ার স্ত্রী জেসমিন বেগম (৩০) ও মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৩) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। একই ঘটনায় ইয়াকুব মিয়া, তার মা এবং দুই সন্তান জুবাইর ও জুনাইদ অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন।
স্থানীয়রা আশংকাজনক অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। বর্তমানে তারা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী ধারণা করছেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ইয়াকুব মিয়া একই ঘরের একটি কক্ষে মুদি মালের দোকান এবং অপর কক্ষে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। রোববার রাতেও যথারীতি তিনি দোকান বন্ধ করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করে তার ঘরে আগুন ধরে। এতে দোকানে মজুত রাখা গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন ধরে যায় এবং আগুনের তীব্রতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। মুহুর্তেই সারা ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এবং পরিবারের সবাই অগ্নিদগ্ধ হয়। অগ্নিকান্ডের পরপরই স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশকে খবর দেয়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রায় দুইঘন্টা পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ইয়াকুব মিয়ার স্ত্রী জেসমিন বেগম ও মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে। তবে, আগ্নিকান্ডের সঠিক কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তৎক্ষণিক নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
ইয়াকুব মিয়ার প্রতিবেশী জোলহাস মিয়া জানান, আমরা পরিবার নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শোনে উঠে দেখি ইয়াকুবের সারাঘরে আগুন ধরে গেছে। এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। স্থানীয় এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় অল্পের জন্য তার নিজের বসতঘরও আগুনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান জানান, পার্শ্ববর্তী গ্রামে হওয়ায় বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা দৌড়ে ঘটনাস্থলে যাই। স্থানীয় এলাকাবাসীকে নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। আর ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশকে খবর দেই। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রায় দুইঘন্টা পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
এ দিকে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান, থানার ওসি কে.এম. নজরুল, সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য সুবাস দাস, পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ কমিটির সাবেক সদস্য ইমরান হোসেন সুমন, ইউপি সদস্য জালাল হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাহমিলুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেককে দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা এবং আহত প্রত্যেককে চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।