পৃথিবী থেকে অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অতীতের গর্ভে হারিয়ে গেছে তারা। কিন্তু একদা তাদের পদচারণা ছিল মৃত্তিকার বুকে। বর্তমান যুগে আরও অনেক প্রাণী রয়েছে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে। আমরা মানুষ সেগুলোর তালিকা করেছি ‘বিপন্ন’ ও ‘মহাবিপন্ন’ প্রাণী হিসেবে। কিন্তু নিজেরাও যে আমরা ঝুঁকিতে আছি, আমাদের অস্তিত্বও যে আজ সংকটের মধ্যে পড়েছেÑ এ কথা কি আমরা চিন্তা করি? সংবাদ মাধ্যমে ‘বিশ^ব্যাপী অস্তিত্ব সংকটে মানুষ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এ সংকটের কারণ ‘জলবায়ু পরিবর্তন’।
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বছরের এই মাঝপর্বে পৃথিবীর বিশাল অংশজুড়ে চলছে প্রচÐ তাপপ্রবাহ। তীব্র গরমে পুড়ছে ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার অনেক দেশ। ভীষণ তাপে জাপানের জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত। অনেক স্থানে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। কোথাও শুরু হয়েছে বন্যা, কোথাও দাবানল। এসব স্থানে তাপমাত্রা বেড়েছে অস্বাভাবিক। মানুষের অস্তিত্বের পক্ষে তা রীতিমতো হুমকি হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ এর বাইরে তো নয়ই, বরং বিশে^র জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল। তাই বাংলাদেশে স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রভাব পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। এটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে এ অঞ্চলের মানুষের ওপর। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ ২০১০ সালে গেøাবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স প্রকাশ করেছিল। ওই সূচকে তখন বলা হয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে বাংলাদেশ। এক যুগেরও বেশি সময় পরে এসে এ অবস্থার কতটুকু ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে, তা কি আমরা বলতে পারি? জার্মান ওয়াচের ২০০৭ ও ২০০৮ সালের প্রতিবেদনেও বাংলাদেশকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ক্ষতির বিচারে বাংলাদেশকে ‘পোস্টার চাইল্ড’ আখ্যা দিয়ে থাকেন সারাবিশে^র গবেষকরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হয়, তার সরাসরি প্রভাব পড়ে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর ওপর। তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, মেরু অঞ্চলের জমাট বরফ গলে যাওয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাত হ্রাস, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সুপেয় পানির অভাব, মরুকরণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধিÑ এসবের প্রত্যক্ষ শিকার হচ্ছে মানুষ। শিশুরা রয়েছে উচ্চঝুঁকিতে; বিশেষ করে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তানের শিশুরা। এ তথ্য ইউনিসেফের। এটি অত্যন্ত আশঙ্কার কথা। আমরা জানি, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অনেকাংশে দায়ী ধনী দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ। যেমন বন্যপ্রাণী ‘বিপন্ন’ ও ‘মহাবিপন্ন’ হয়েছে মানুষের কারণে, তেমনি অনেকটা মানুষের কারণেই এ পরিবেশ বিপর্যয়। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে মানুষকে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে। ধনী দেশগুলোকে আরও সক্রিয় হতে হবে। জলবায়ু অভিযোজন ও স্থিতিস্থাপকতায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে হবে। নইলে মানবজাতির অস্তিত্বও ‘বিপন্ন’ প্রাণীর তালিকায় স্থান পাবে।