বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র

6

কাজির বাজার ডেস্ক
বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন উজরা জেয়া। এর আগে সকালে প্রথমে গণবভনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন উজরা-লু’রা। পরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করেন। অন্যদিকে মার্কিন প্রতিনিধি দল বলছে, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে প্রতিশ্রæতি আছে, সেই প্রতিশ্রæতি পূরণে সহায়তা করবে তাঁদের ভিসা নীতি। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সাক্ষাতে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি, রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়।
উজরা জেয়া আরও বলেন, সহিংসতামুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের রাজেনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে এতে সরাসির সম্পৃক্ত থাকবে তার দেশ।
এদিকে এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে সকালে উজরা জেয়া এক টুইটে আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তার মতে, এর মাধ্যমেই ভবিষ্যতে দেশের জনগণের জন্য গণতন্ত্র আরো সমৃদ্ধ হবে।
তিনি টুইটে আরও বলেন, বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের অংশীদারত্ব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি তাদের উদারতা প্রশংসনীয় এবং আশা করছি, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশের জনগণের জন্য গণতন্ত্র আরো সমৃদ্ধ হবে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিতে দুপুর একটা ২০ মিনিটে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যান উজরা জেয়া। সেখানে তিনি পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে উজরা জেয়া আরও জানান, কোন দলের প্রতি আমাদের কোন পক্ষপাতিত্ব নেই। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ছাত্রজীবন থেকে এবং এমনকি বঙ্গবন্ধু পরিবার ও আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকারের জন্যে সবসময়ই লড়াই করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময়ই জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকারের জন্যে লড়াই করেছি।’
তিনি আরো বলেন, বিএনপিই দেশে ভোট কারচুপি শুরু করেছিল, যা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তন করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্যে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২০১৩-১৫ সালে বিএনপি এবং তাদের মিত্রদের নৃশংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং অগ্নিসংযোগের কথা স্মরণ করেন যাতে ৫০০ লোক নিহত হয়েছিল।
তিনি তার ওপর ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথাও উল্লেখ করেন, যখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানব ঢাল তৈরি করে তাকে রক্ষা করেছিলেন। সফররত মার্কিন বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি বলেছেন, তিনি ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার ওপর জোর দেন তিনি। উজরা জেয়া উল্লেখ করেন যে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপারেশনাল খরচের জন্য প্রায় ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে। বাংলাদেশে এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য তিনি শেখ হাসিনার ভ‚য়সী প্রশংসা করেন।
উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতা করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে দেশের দুটি ভিন্ন স্থানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, কিন্তু, এখন শিবিরগুলোতে মানব পাচার ও অসামাজিক কার্যকলাপ হচ্ছে-যা দেশের নিরাপত্তার জন্য খুবই উদ্বেগজনক। শ্রম ইস্যু নিয়ে কথা বলার সময় উজরা জেয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শ্রম সংস্কার উদ্যোগে বাংলাদেশের সাথে একত্রে কাজ করবে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, শ্রমিকদের মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে শিল্প মালিকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ডোনাল্ড লু ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন।
বিকেলে উজরা জেয়া মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এছাড়া সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গেও বৈঠক করবে উজরার নেতৃত্বাধীন মার্কিন দলটি। এর বাইরে ঢাকা সফরকালে মার্কিন প্রতিনিধি দলটির সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শ্রমিক নেতাসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। গত মঙ্গলবার চারদিনের সফরে দিল্লি থেকে ঢাকায় আসেন উজরা জেয়া। তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে আরো আছেন ইউএসএআইডি এশিয়া ব্যুরোর উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌর। বুধবার তারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এই প্রতিনিধি দল ঢাকা ত্যাগ করবে শুক্রবার।