কাজির বাজার ডেস্ক
জন্ম-মৃত্যু সনদের ক্ষেত্রে জনগণকে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং কী পরিমাণ ডাটা সার্ভার থেকে গায়েব হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১০ আগস্ট ঠিক করেছেন আদালত। রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সহকারী রেজিস্ট্রার জেনারেল সামিউল ইসলাম রাহাদের সই করা একটি প্রতিবেদন রবিাবর উচ্চ আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ওই প্রতিবেদনটি রিটকারী আইনজীবীর কাছে অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। তাই এ বিষয়ে একটি পরিপূর্ণ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলেছেন আদালত। এ ছাড়া এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১০ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত। ওই সময়ের মধ্যে এই প্রতিবেদনের অগ্রগতি জমা দিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
রোববার (৯ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। এর আগে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রতিবেদনটি আসে। এরপর এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৫ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে অতিমাত্রায় ব্যবহারকারীর চাপে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভার বিআরআইএস সফটওয়্যারটি অকার্যকর (আউট অব অর্ডার) হয়ে পড়ে এবং (তিন) মাস বিকল অবস্থায় ছিল বলে স্বীকার করে সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে অতিমাত্রায় ব্যবহারকারীর চাপে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভার বিআরআইএস সফটওয়্যারটি অকার্যকর (আউট অব অর্ডার) হয়ে পড়ে এবং (তিন) মাস বিকল অবস্থায় ছিল। সে সময় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কাজ বন্ধ ছিল। অনেক জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন তথ্য কারিগরি ও যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে ডাটাবেজ থেকে বিনষ্ট হয়ে যায়। প্রায় একই সময়ে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (আইসিএএ) এর ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্বের সকল বিমান বন্দরের মাধ্যমে গমনাগমনের ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে সকল হাতে লেখা পাসপোর্ট বা এমআরপিতে রুপান্তর করার বাধ্যবাধকতা ছিল এবং এই এমআরপি পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে অন্যতম উপাদান ছিল জন্ম নিবন্ধন সনদ। ফলে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কাজ অবিলম্বে শুরু করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসতে থাকে। তখন এই সার্ভার পুনরুদ্ধার করার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এর অংশ হিসেবে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) থেকে একটি উন্নত মানের সার্ভার বরাদ্দ নিয়ে ইউনিসেফ বাংলাদেশের সহায়তায় অতি দ্রæত একজন ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট নিয়োগ দিয়ে সার্ভারটি সচল করা হয় এবং তখন অব্দি প্রায় ১৪ কোটির অধিক মানুষের ওপর (ডাটা) নতুন সার্ভারে স্থানান্তর করা হয়। ইউনিসেফ কর্তৃক নিয়োগকৃত কনসালটেন্ট, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও প্রকল্পের কারিগরি টিম এর সহায়তায় ২০১৫ সালের ২৯ আগস্ট (বিসিসি) কর্তৃক প্রদত্ত আপগ্রেডেড সার্ভারে বিআরআইএস সফটওয়্যার এবং ডাটাবেজ স্থানান্তর কাযর্ক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে সিস্টেমটি অটো ব্যাকআপসহ চালু করা হয় যা ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পযর্ন্ত সংশ্লিষ্ট কনসালটেন্ট, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ও প্রকল্পের কারিগরি টিম এর অবজারভেশনে ছিল। পিক আওয়ারে এক সাথে ৫০ থেকে ৬০ হাজার ব্যবহারকারী সফটওয়্যারটি ব্যবহার করায় প্রায়ই তা সেøা হয়ে যাচ্ছিল। এমনকি কখনো কখনো তা সাসপেক্ট মুড এ চলে যাচ্ছিল। এতে বিআরআইএস সিস্টেম এর সকল কাযর্ক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে তা রিস্টার্ট করতে হচ্ছিল। এ অবস্থায় হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন তথ্যাদি অনলাইনভুক্তকরণের কাযর্ক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কিছু ডাটার অবলুপ্তি ঘটে।