কাজির বাজর ডেস্ক
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) এক কোটি কার্ডধারী আগামী জুলাই মাস থেকে ওএমএসের চাল পাবেন। ওএমএসের ব্যবস্থাপনার ত্রæটি দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর খাদ্য মন্ত্রণালয় এ পদক্ষেপ নিলো।
রোববার সচিবালয়ের বোরো সংগ্রহের অগ্রগতি, কার্ডের মাধ্যমে ওএমএসের চাল বিতরণ ও সামগ্রিক খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এ তথ্য জানান। খাদ্য অধিদপ্তর পরিচালিত ওএমএস (খোলাবাজারে বিক্রি) কর্মসূচির আওতায় একজন ব্যক্তি দিনে ৩০ টাকা কেজি ধরে সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল কিনতে পারেন। বর্তমানে এক কোটি পরিবার টিসিবির পণ্য পাচ্ছেন। আগামী জুলাই থেকে অন্য পণ্যসামগ্রীর সঙ্গে তারা পাঁচ কেজি করে চাল পাবেন। ওএমএস ডিলাররা তাদের এ চাল সরবরাহ করবেন বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, অন্তত এক কোটি পরিবার এই পাঁচ কেজি চাল পাবেন। তারা সারা বছরই পাবেন। পাশাপাশি আমাদের ওএমএস চলতে থাকবে। আমরা ওএমএসের ডিজিটাল কার্ড তৈরি করছি।
কার্ডে চাল দেওয়ার পদ্ধতি জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, টিসিবির জিনিস যখন পাবেন, তখন একই প্যাকেটে তাদের এ চাল দেওয়া হবে। আমাদের কাছে আসতে হবে না, ওএমএস ডিলাররা এটি দেবে। অর্থাৎ টিসিবিতে আরেকটি পণ্য হিসেবে এ চাল যুক্ত হয়েছে। এক কোটি পরিবারের যেখানে যেখানে কার্ড আছে, সেখানে সেখানে এটা দেওয়া হবে। যখনই তারা টিসিবির মাল পাবেন, তখনই এই পাঁচ কেজি চালও পাবেন।
মন্ত্রী বলেন, চালের দাম যখন একটু বাড়তির দিকে থাকে, তখন সারাদেশে প্রায় দুই হাজার ৫০০ ডিলারের মাধ্যমে খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম চালিয়েছি। শুধু বিতরণই না, বাজেটে যা ছিল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে আমরা তার চেয়েও বেশি মানুষের কাছে বিতরণ করেছি। অতিরিক্ত দুই লাখ মেট্রিক টন ওএমএস বিতরণ করেছি।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ৫০ লাখ পরিবারকে যে নিয়মিত পাঁচ মাস খাদ্যবান্ধব সহায়তা দেওয়ার, তা দিয়েছি। তারা প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছে। আমরা করোনাকালীন পাঁচমাসের জায়গায় আরও একমাস বাড়িয়ে বিতরণ করেছি।
তিনি বলেন, শুধু তা-ই না, করোনার সময় বিশেষ খাদ্যবাবান্ধব কর্মসূচিতে প্রতি জেলায় ১০ টাকা করে কেজি চাল তালিকা ধরে বিতরণ করা হয়েছে। এখন এ সহায়তার এনআইডিভিত্তিক ডিজিটাল কার্ড তৈরি করা হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা অভ্যন্তরীণভাবে সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম। আর চার লাখ টন ধান। চাল ছিল ৪৪ টাকা কেজি, ধান ছিল ৩০ টাকা। আগস্টের শেষ দিন পর্যন্ত আমাদের এগুলো কেনার কথা। এরই মধ্যে আমরা চাল কিনেছি ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৭৮ টন আর ধান কিনেছি ১ লাখ ১৫ হাজার ২৭২ টন। জুনের পর, জুলাই আগস্ট, এভাবে মাস ভাগ করতে গেলে এই জুনে ৪ লাখ টন কিনলেই আমাদের টার্গেট পূরণ হবে। আমরা টার্গেটের বেশি কিনেছি। আশা করছি, সম্পূর্ণ চাল কিনতে পারবো। ধান কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, পর্যন্ত আমরা ধান কিনেছি ১ লাখ ১৫ হাজার ২৭২ টন। এখনো তিনদিন সময় আছে। আমরা লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবো বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এবার যেহেতু বাম্পার ফলন হয়েছে, সেজন্য চালের মানও আমরা ভালো পেয়েছি। চালের মান সবসময় ভালো থাকে, এবার আরও ভালো হবে। কারণ, ধানের মান ভালো আছে।
মন্ত্রী বলেন, বন্যা, করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি সঠিকভাবে পালন করেছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। একসময় বিশ্ব খাদ্য সংস্থা থেকে বলা হয়েছিল, বিশ্বে দুর্ভিক্ষ হবে, বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। কিন্তু আমরা সঠিকভাবে তা মোকাবিলা করতে পেরেছি। চাল নেই, এমন অবস্থা কখনো আমাদের হয়নি। আমরা সফলতার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছি।