ওসমানী হাসপাতালে নির্মাণ শ্রমিক নয়ন হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ৫ আসামী ৩ দিনের রিমান্ডে

7
ছেলে হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি পিতার

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্সার ইউনিটের নির্মাণাধীন ভবনের নির্মাণশ্রমিক নয়ন মিয়াকে (২০) চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শনিবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির সদস্যরা হলেন- সিলেট গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী খালেদ সাইফুল্লাহ, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কালাম আজাদ ও হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার ৯ জুন সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে ওসমানী হাসপাতালের ক্যান্সার ইউনিটের নির্মাণাধীন ভবনে কর্মরত নয়ন মিয়া ও আইয়ুব আলী নামের দুই শ্রমিককে চুরির অভিযোগে একটি রুমে নিয়ে ব্যাপক মারধর করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। পরে আহত অবস্থায় সকাল সোয়া ৯ টার দিকে নয়নকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে আইয়ুব আলীকে হাত-পা বাধা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত নয়ন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার আবদুল জলিলের ছেলে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে নয়নের বাবা আবদুল জলিল বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনকে আসামি করা হয়।
ঘটনার ৫ জনকে গ্রেফতার করে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তারা হলেন-কুড়িগ্রামের কচাকাঁটা থানার নারায়ণপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম, আয়নাল, সাবান আলী, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার তেঘরা গ্রামের রুবেল মিয়া ও বগুড়া শিবগঞ্জের আবদুর রাজ্জাক। শনিবার তাদের সিলেট মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। রবিবার আদালত শুনানির পর ৫ আসামীকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এসআই জুয়েল আহমদ তদন্ত করছেন। শুক্রবার সকাল ৯টায় হাসপাতালের একটি নির্মাণাধীন ভবনে চুরির অপবাদে নয়নকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নয়ন ওই ভবনেই কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এ ঘটনায় তার বাবা আব্দুল জলিল বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। নিহত নয়ন সপরিবারে বিশ্বনাথ পৌর শহরের টিএনটি রোডের মোজাহিদ আলীর কলোনিতে বসবাস করতেন। তাদের মূল বাড়ি কোম্পানিগঞ্জ থানার খেচিটিলা গ্রামে। শনিবার বিকেলে নয়নের লাশ বিশ্বনাথে পৌঁছলে তার মা, বাবা, ভাই, বোন ও নববধূর কান্নায় চারপাশ ভারি হয়ে ওঠে। এ সময় প্রতিবেশী ও নয়নের সহপাঠীরা সেখানে ভিড় করেন। এতে টিএনটি রোডে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরে বিশ্বনাথ থেকে লাশ তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন।
নয়নের বাবা আব্দুল জলিল জানান, প্রায় ১০/১২ দিন আগে কাজের খোঁজে নয়ন বাসা থেকে বের হয়েছিল। কিন্তু ছেলের রোজগারের টাকার বদলে লাশ পেলেন তিনি। তার পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি, নয়ন খুব ভালো ছেলে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কখনও এমন কোনো অভিযোগ আসেনি। চুরির অপবাদে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ছেলে হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করেছেন।
তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে ওসমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন- যদিও বিষয়টি হাসপাতালের নয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনার বিস্তারিত জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।