হজযাত্রায় সংকট সমাধান হোক

4

প্রতিবছর হজে যেতে বিড়ম্বনায় পড়া যেন একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে টাকা-পয়সা সময়মতো জমা দিয়েও নির্দিষ্ট সময়ে ভিসা পান না। ফলে যথাসময়ে ফ্লাইট মেলে না। অনেকের যাত্রাই শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়।
এবারও ঘটেছে এ ঘটনা। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে অনেকের হজযাত্রা। এবারও ভিসা জটিলতার কারণে পর্যাপ্ত হজযাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফ্লাইট বাতিল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আবার অনেকে ভিসা পেয়েও যেতে পারছেন না হজ এজেন্সিগুলোর কারণে।
বেশি লাভের আশায় হজযাত্রীদের জন্য সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করতে দেরি করছে এজেন্সিগুলো। বাড়ি ভাড়া না হওয়ায় এখনো ২০ হাজার হজযাত্রীর ভিসা হয়নি। তাই বিমানের টিকিটও কিনতে পারছে না এজেন্সিগুলো। আবার বিমানের টিকিট বিক্রি না হওয়ায় এ পর্যন্ত ১৫টি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
এই ১৫টি ফ্লাইটে ছয় হাজার ২৮৫ জন হজযাত্রী যথাসময়ে সৌদি আরবে পৌঁছতে পারেননি। এখন এসব হজযাত্রীর জন্য নতুন ফ্লাইট লাগবে। সৌদি সরকার কোনো কারণে নতুন ফ্লাইটের অনুমোদন না দিলে এসব যাত্রীর হজে যাওয়া কঠিন হতে পারে। কারণ আগামী ২২ জুন থেকে সব ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাবে।
আমাদের দেশের হজযাত্রীদের অতীত অভিজ্ঞতাও সুখকর নয়।
ত্রæটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার কারণে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া হজযাত্রীরা প্রতিবছরই বিড়ম্বনার শিকার হন। দেখা যায়, বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো যাওয়া ও আসার ফ্লাইট নিশ্চিত না করেই হজযাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেয়। পরে ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে পারে না। অনেক সময় সৌদি আরবে ঠিকমতো বাড়ি ভাড়া করা হয় না। যে ধরনের বাড়িতে হজযাত্রীদের রাখার প্রতিশ্রæতি দেওয়া হয়, সেখানে তা করা হয় না। নিম্নমানের ঘরে গাদাগাদি করে রাখা হয়। কাবা শরিফের কাছে বাড়ি ভাড়ার কথা বলে টাকা নিয়ে রাখা হয় দূরবর্তী কোনো স্থানে। গাড়ির কথা বলা হলেও গাড়ি দেওয়া হয় না। প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী গাইড দেওয়া হয় না। ফলে অপরিচিত জায়গায়, বিশেষ করে বয়স্ক হাজিদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
এ ধরনের ঘটনা যখনই ঘটে, তখন মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলে। এবারও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলেছে, হজযাত্রীদের ভিসা ও বিমানের টিকিট দ্রæত সম্পন্ন করার জন্য হজ এজেন্সিগুলোকে কয়েক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব হজ এজেন্সি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশনের (হাব) সভাপতি বলেছেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রতিবছর হজ করতে যান পবিত্র মন নিয়ে পুণ্য লাভের আশায়। ধর্মীয় এই কাজের ব্যবস্থাপনাও তাই ত্রæটিহীন হওয়া উচিত। মনে রাখা দরকার, হজ ব্যবস্থাপনা অন্য ১০টি সাধারণ ব্যবসার মতো নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মানুষের ধর্মীয় আবেগ-অনুভ‚তি। নানা বয়সের হাজিদের সুবিধা-অসুবিধার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের ভাবমূর্তিও। ছয় হাজার হজযাত্রীর ফ্লাইট বাতিলজনিত যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা সমাধানে দ্রæত ব্যবস্থা নিন। সবার হজযাত্রা নিশ্চিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।