আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশি ক‚টনীতিকরা দিন দিন তৎপর হয়ে উঠছেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় একটি দৈনিকের খবরে প্রকাশ, ক’দিন ধরেই বাংলাদেশের রাজনীতি ও আসন্ন ভোট নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে তিনি জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সবশেষ গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন পিটার ডি হাস। এই বৈঠকগুলো রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে হয়েছে। নির্বাচন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিদেশি দূতদের আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ দুঃখজনক। আমরাও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পক্ষে। ইতোমধ্যে একটি নতুন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। সেই নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের প্রতি সবার আস্থা থাকা প্রয়োজন। আগ বাড়িয়ে বিদেশি দূতদের মন্তব্য করা, মাথা ঘামানোর সুযোগ নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ পুরনো ঘটনা, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে এ দেশের রাজনীতিতে যখন সামরিক বাহিনী অংশগ্রহণ শুরু করে তখন থেকেই বাংলাদেশ কী করবে, কীভাবে করবে- সব নির্দেশনাই আসতে থাকে বিদেশ থেকে। পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে তখন রাজনীতির জন্য অর্থের জোগান হলেও রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার গোয়েন্দা তৎপরতার ভিত্তিতে। এমন হস্তক্ষেপের চিত্র কিছুটা পরিবর্তন হলেও কমছে বলা যাবে না। দেখা যাচ্ছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা নিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা কিছুদিন ধরে মন্তব্য করে যাচ্ছেন। রাজনীতিক বিশ্লেষকদের মতে, এমন অবস্থার জন্য আমরা দায়ী। বিদেশিদের কথা বলার সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি। এ দেশের রাজনীতিবিদরা যখনই সরকারের বাইরে থাকেন তখনই ‘নালিশ’ নিয়ে গিয়ে হাজির হন বিদেশিদের কাছে। এটা এখানকার রাজনৈতিক বাস্তবতা। রাষ্ট্রদূতদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ শিষ্টাচারবহিভর্‚ত একটি কাজ। তবে শিষ্টাচারবহিভর্‚ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক‚টনীতিকরা যেমন একদিকে দায়ী, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহাবস্থান না থাকাও সমানভাবে দায়ী। আগামী নির্বাচন নিয়ে অন্য দেশের সহযোগিতা চেয়ে কার্যত সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে বিএনপি। এমন অভিযোগ করছেন সরকারদলীয় একাধিক নেতা। আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা নতুন নয় এবং সে অস্থিরতার ফলে বাইরের হস্তক্ষেপ হয়ে থাকে। এরশাদ সরকারের পতনের পর তথা ১৯৯০ সালের পর থেকে যত সরকারই এসেছে, এ দৃশ্য বারবার দেখা গেছে। সেই দৃশ্য এখন আবার দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়েছে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তাই আমাদের নিজেদের নিজে সম্মান দেয়া দরকার। সমস্যা থাকবেই এবং তা নিজেদের মধ্যেই আলোচনা, প্রতিবাদের মাধ্যমে সমাধান করে নিতে হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বদনাম করা বা নালিশ করার রাজনৈতিক পদ্ধতি থেকে সব রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীগুলোর বেরিয়ে আসা দরকার। যাতে বিদেশিরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে না পারে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্য প্রয়োজন সরকার এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সহাবস্থান। নিজেদের ভুল, নিজেদের অপকর্ম এসবের দায় ও দায়িত্ব যেমন নিজেদের, তেমনই এসব শুধরানোর দায়িত্বও আমাদেরই।