হত্যা মামলায় দুই জনের যাবজ্জীবন ও চার জন খালাস

7

 

স্টাফ রিপোর্টার
সিলেটের ওসমানীনগরে কুতুব উদ্দিন হত্যা মামলায় দুই জনকে যাবজ্জীবন ও চার জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত আসামীদেরকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের বিশেষ দায়রা জজ আদালত ও জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস এ রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছেন, হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার ধীতপুর বাঘাসুরা গ্রামের সওদাগরের ছেলে মিছির আলী এবং বি-বাড়ীয়া জেলার নাসিরনগর থানার ডোলাঢোল গ্রামের মঞ্জুর আলী উরফে মনজ এর ছেলে শিশু মিয়া। রায় ঘোষনার সময় সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামী আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
খালাসপ্রাপ্তরা হচ্ছেন, সিলেটের ওসমানীনগর থানার কাওয়ারাই গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে পংকী মিয়া, হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার ধীতপুর বাঘাসুরা গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আলকাছ মিয়া উরফে একলাছ, সিলেটের বিশ্বনাথ থানার দিতপুর গ্রামের আব্দুল মোতালিবের ছেলে নুর আলম ও ওসনামীনগর থানার রাঘবপুর গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে আহাদ মিয়া। মামলার অপর দুই আসামী খালাস পাওয়া আলকাছ মিয়া উরফে একলাছের ভাই আকলাছ মিয়া ও ওসমানীনগর থানার তাজপুর এলাকার মৃত উস্তার উল্লার ছেলে কস্তর উল্লা মামলা চলাকালীন সময়ে মৃত্যুবরণ করেন।
আদালত ও মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৩ টার দিকে সিলেটের ওসমানীনগর থানার খাপন গ্রামের মৃত হাজী আব্দুস সামাদের ছেলে মোঃ জমির উদ্দিনের গোয়ালঘর থেকে হালের ৪টি বলদ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল আসামীরা। এ সময় গরুগুলোর সাড়াশব্দ পেয়ে জমির উদ্দিনের ভাতিজা কুতুব উদ্দিন (৩৩) ও তার ভাই লুৎফর রহমান দরজা খুলে দেখেন চোররা গরুগুলো নিয়ে বাড়ির উত্তর দিকে যাচ্ছে। পরে বাড়ির লোকজন চিৎকার শুরু করলে চোররা বলদ ৪টি রেখে দৌড়ে পালাতে থাকে। এ সময় কুতুব উদ্দিন ধাওয়া করে কুরুয়া খাপন এলাকা থেকে গরু চোর আকলাছ মিয়াকে ধরে ফেলে। তখন আকলাছ মিয়া কুতুব উদ্দিনকে ধারালো চাকু দিয়ে বুকের বাম পাশে আঘাত করলে রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি রাস্তায় পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তৎক্ষণিক বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী পালিয়ে যাওয়া গরু চোর মিছির আলীকে আটক করলেও অপর আসামীরা পালিয়ে যায়। পরে মিছির আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানায়, আকলাছ মিয়া কুতুব উদ্দিনকে ধারালো চাকু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় নিহত কুতুব উদ্দিনের চাচা মোঃ জমির উদ্দিন ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩/৪ জনকে আসামী করে ওসমানীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার নং-১৪ (২৮-০৯-২০০৩)। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ওসমানীনগর থানার এসআই সৈয়দ সাজেদুর রহমান ২০০৪ সালের ২০ নভেম্বর আসামী মিছির আলী ও শিশু মিয়াসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং-১০০) দাখিল করেন এবং ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর আদালত ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন (অভিযোগগঠন) করে এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী ও ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মঙ্গলবার আদালত ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে আসামী মিছির আলী ও শিশু মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। এছাড়া অপর আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষে পিপি অ্যাডভোকেট মোঃ মফুর আলী ও আসামীপক্ষে অ্যাডভোকেট আখতার উদ্দিন আহমদ, অ্যাডভোকেট শাহ আশরাফুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মুহিবুর রহমান মামলাটি পরিচালনা করেন।