বর্ষা মৌসুম এখনো শুরু হয়নি। বর্ষা মৌসুমে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সবাইকে সতর্ক এবং সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত কয়েক বছরের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করে তারা দেখেছেন এ বছর এ সময় পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অন্যান্য বছরের কয়েকগুণ বেশি। এখনই মশক নিধনে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া না হলে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সারাদেশে ১ হাজার ৫৩৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বছর এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। হাসপাতালে এ বছর জানুয়ারিতে ৫৬৬, ফেব্রæয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩ এবং মে মাসের ২০ দিনে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৪৬১ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জানুয়ারিতে ৬, ফেব্রæয়ারিতে ৩, এপ্রিলে ২ এবং মে মাসে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জোর পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন কীটতত্ত¡বিদরা। ২০১৯ সালেদেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ডেঙ্গু রোগে তখন ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এখনো ডেঙ্গুজ্বরের কোনো প্রতিষেধক বের করতে পারেনি সরকার। ডেঙ্গু থেকে রেহাই পেতে হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আইইডিসিআরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী। হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি। এ মশা যত বেশি হবে ডেঙ্গুর হারও তত বাড়বে। উৎস বন্ধ না করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে। কীটতত্ত¡বিদেরা বলছেন, এখন এমন অনেক জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, যার সঙ্গে বৃষ্টির পানির সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, ওয়াসার মিটার বাক্স এবং বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি রয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ চলাকালীন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। এরপর দুই সিটি মশক নিয়ন্ত্রণে যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সেগুলো ছিল কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। ঝুঁকি চিহ্নিত ওয়ার্ডগুলোতে মশা নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এডিস নিধন এবং এডিসের বংশবিস্তার রোধে জোরদার অভিযান পরিচালনা করবে- এ প্রত্যাশা নগরবাসীর।