অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। এখন ভরা মৌসুমে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে শুধু নিম্নবিত্ত নয়, সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের নাভিশ্বাস চরমে উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে- উৎপাদন ঘাটতি, হাতবদলের কারণে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানি বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের পেঁয়াজের বাজার। গত দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছর দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তা দিয়ে চাহিদা মেটে না। চাহিদার একটি বড় অংশ আমদানি করে মেটাতে হয়। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজের উৎপাদন গতবারের তুলনায় ২ লাখ টনের মতো কম হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ভারতে বৃষ্টি হলে বা আমদানি বন্ধ হলে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এর পেছনে শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত। অতি মুনাফালোভী পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মানুষকে জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘটনা নতুন নয়। টিসিবির হিসাবে গত বছরের তুলনায় বর্তমানে পেঁয়াজের দাম ৭৮ শতাংশ বেশি। দেড় মাস আগে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি ৩০-৪০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। ফলে দেড় মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৯৩ শতাংশ, যা মোটেও কাম্য নয়। দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ২৬-২৮ লাখ টন। চলতি বছর পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিক‚ল পরিবেশের কারণে ৩০-৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। সে হিসাবে প্রকৃত উৎপাদন দাঁড়ায় ২২-২৪ লাখ টন। চাহিদার তুলনায় কম হলেও এ সময়ে পেঁয়াজের তেমন ঘাটতি নেই। তাহলে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেন ২০-২৫ টাকা বাড়বে? এটা সিন্ডিকেটের কারসাজি ছাড়া কিছুই না। সিন্ডিকেট করে যারা পণ্যের দাম বাড়ায় তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছে। এতে ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ছে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই নজর দেয়া উচিত। বাজার নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিশেষ অভিযান পরিচালনা শুরু করা উচিত এবং এই অভিযান সারা বছর অব্যাহত রাখা দরকার। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হলে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কাজেই নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা দূর করার জন্য সময়মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ে দেশবাসীর তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। সামনে কুরবানি ঈদ আসছে, এখনই পেঁয়াজ আমদানি বা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসহ বাজার তদারকি জোরদার করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক কর্মকাÐের প্রতি ক্ষেত্রেই সিন্ডিকেটের আস্ফালন লক্ষণীয়। তবে এটা নতুন কিছু নয়, সাংবার্ষিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এ চক্রটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। এরা ইচ্ছামতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে অনায়াসে অন্যায্যভাবে বিপুল মুনাফা লুটে নিচ্ছে। আমরা মনে করি, বাজার পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য সবার আগে প্রয়োজন বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন। ক্রেতাদেরও সজাগ থাকতে হবে। এই পরিবর্তন কবে ঘটবে তার জন্য অপেক্ষা করে নিষ্ক্রিয় বসে থাকলে চলবে না। এর জন্য রাষ্ট্র-সমাজের সচেতন দায়িত্বশীল মহলকে ভ‚মিকা রাখতে হবে।