কোর্ট পয়েন্টে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে নজরুল ইসলাম খান
স্টাফ রিপোর্টার
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন তাকে কেউ ক্ষমতায় রাখতে চায়না তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না আওয়ামীলীগের পায়ের নিচে মাটি নেই। আওয়ামী লীগের সময় শেষ হয়ে গেছে, সারাদেশে মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আজ ঐক্যবদ্ধ। তাই দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নামতে হবে। বিএনপি জনগণের ন্যায্য দাবী নিয়ে মাঠে আন্দোলন করছে, তাই জনগন বিএনপির সাথে আছে। জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। এই সংগ্রামে আমরা বিজয়ী হব। দেশে অতিশীঘ্রই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে এবং জনগণের সরকার দেশের দায়িত্ব নেবে ইনশাআল্লাহ।
শুক্রবার বিকেলে ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অধিনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবী মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানী, দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতি, বিদ্যুতের লোড শেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দূর্নীতির প্রতিবাদে এবং ১০ দফা বাস্তবায়ন দাবীতে’ বিএনপির কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের মানুষ যখন আন্দোলনমুখী, ঠিক তখনই আওয়ামী লীগ নির্বাচনের নামে দেশবাসীর সাথে প্রহসন করছে। দেশের জনগন বিভিন্ন সিটিতে এই নির্বাচনকে বর্জন করেছে। আগামী দুই এক দিনের মধ্যে আরো ভালো খবর পাওয়া যাবে। নির্বাচন বর্জন করা মানে শুধুমাত্র নিজে প্রার্থী না হওয়া নয়, বর্জন মানে হলো পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্য প্রার্থীর পক্ষেও কাজ না করা। বিএনপি আওয়ামীলীগের অধিনে কোন নির্বাচনে অংশ নেবে না। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন তাদেরকে দল মনে রাখবে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন। সমাবেশের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। কিন্তু সরকার মাঠটি পুলিশ দিয়ে দখল করেছে। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা পুরো নগরী দখলে নিয়েছে। এতে প্রমাণ হয় আওয়ামীলীগের সময় আর বেশী বাকি নেই, জনগণ রাস্তায় নেমেছে। আওয়ামী লীগের পতন নিশ্চিত করে আমরা ঘরে ফিরব ইনশাআল্লাহ।
সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের সময় শেষ। আওয়ামী লীগের অধিনে বিএনপি কোন নির্বাচনে অংশ নেবে না। যতই বাঁধা আসুক না কেন ১০ দফা দাবী বাস্তবায়ন করে এই সরকারের পতন ঘটানো হবে।
ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, এই সরকারের সময় শেষ, তাই তারা আবল তাবল বলতেছে। আগামী দিনে রাজপথ দখলের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে। এই সরকারের পতন অনিবার্য।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাক স্বাধীনতা ও আইনের শাসন নেই। বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীদের নামে হাজার হাজার মামলা রয়েছে, অসংখ্য নেতাকর্মী আজ কারাগারে বন্দি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে, দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশের বাহিরে রেখে, আওয়ামীলীগের অধিনে এদেশে কোন নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। অবিলম্বে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, জনগন এখন আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। আওয়ামীগের অধিনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। তাই জনগনও এই নির্বাচনকে বর্জন করবে।
সিলেট জেলা ওলামা দলের আহবায়ক মাও: নুরুল হকের কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে সমাবেশে অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম। জনসমাবেশ শেষে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে, নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি করার কথা থাকলেও পুলিশী বাঁধায় তা করা সম্ভব হয়নি। পরে স্থান পরিবর্তন করে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে কর্মসূচি পালিত হয়।
সমাবেশে বাধা প্রদানের অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সুদীপ দাস বলেন, বিএনপিকে ইনডোরে সমাবেশ করতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু তারা তা না মেনে রেজিস্ট্রারি মাঠে জড়ো হন। অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।