কাজির বাজার ডেস্ক
ফের শুরু হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কার্যক্রম। নতুন করে যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তকরণে গঠন করা হয়েছে ১০ সদস্যের প্রতিষ্ঠান বাছাই কমিটি। চলতি মাসের শেষ দিকে এ কমিটির প্রথম সভা হওয়ার কথা। আগস্টে স্বীকৃতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হতে পারে। এমপিওভুক্তি চ‚ড়ান্তকরণ শুরু হলে অপেক্ষা ঘুচবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রতিষ্ঠানের।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে জানা যায়, এমপিওভুক্তি নীতিমালা অনুসারে সরকার অনুমোদিত ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ শুরু করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতের বরাদ্দ দিয়ে নতুন করে সাধারণ স্কুল-কলেজ, কারিগরি ও মাদরাসা এমপিওভুক্ত করা হবে। গত ৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ লক্ষ্যে ১০ সদস্যের একটি বাছাইকরণ কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) আবদুন নূর মুহম্মদ আল ফিরোজ এ কমিটির আহŸায়ক। অন্য সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) মহাপরিচালক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার যুগ্ম-সচিব, বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার যুগ্ম-সচিব, একই শাখার উপ-সচিব, বাজেট শাখার উপ-সচিব, মাউশির পরিচালক কলেজ ও প্রশাসন, ব্যানবেইসের সিস্টেম অ্যানালিস্ট ও সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব বেসরকারি (মাধ্যমিক-৩) বিদ্যালয় শাখা।
এছাড়া টেকনিক্যাল সাপোর্টের জন্য ব্যানবেইস, মাউশি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চারজন সিস্টেম অ্যানালিস্টকে নিয়ে একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাছাই কমিটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী এবং অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দের আলোকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার বিষয়ে প্রশ্ন আবেদন যাচাই-বাছাই করে মতামতসহ প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করবে। এমপিওভুক্তির আবেদনে দেওয়া তথ্যে কোনো অনিয়ম/অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মতামতসহ প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। প্রতিবেদনে মতামতসহ অন্য বিষয়েও উল্লেখ করতে হবে। এজন্য ব্যানবেইসকে আবেদন গ্রহণ, তথ্য সংগ্রহসহ কারিগরি বিষয়ে সহায়তা দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরি বলেন, ২০২৩ সালে নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সব সদস্যের কাছে পাঠানো হয়েছে এ সংক্রান্ত চিঠি। চলতি মাসের শেষ দিকে কমিটির সভা হতে পারে। আবেদন সংক্রান্ত সব টেকনিক্যাল সাপোর্ট ব্যানবেইস দেবে।
তিনি বলেন, আবেদন শেষে অন্যবারের মতো যাচাই-বাছাই করা হবে। এমপিওভুক্তি নীতিমালা অনুযায়ী যেসব প্রতিষ্ঠান কাম্য যোগ্যতা অর্জন করবে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের কাছে তুলে দেওয়া হবে। সেটি চ‚ড়ান্ত করে পাঠানো হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে চ‚ড়ান্ত করে পাঠালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
সবশেষ ২০২২ সালের জুলাই মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের দুই হাজার ৭১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়। এ পর্যন্ত সারাদেশে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার প্রতিষ্ঠান। গত বছর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় চার হাজার ৬২১টি প্রতিষ্ঠান থেকে মোট চার হাজার ৭২৯টি আবেদন পাওয়া যায়। এরপর সব মানদÐে এক হাজার ৯৪১টি প্রতিষ্ঠান যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। এর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৩০টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এক হাজার ৬৩টি (৬ষ্ঠ-১০ম ১০৩টি, ৯ম-১০ম ৯৬০টি), উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৩১টি (৬ষ্ঠ-১২০৪টি, ৯ম-১২০৩টি ও একাদশ-দ্বাদশ ১২৪টি), কলেজ একাদশ-দ্বাদশ ৯৯টি, ডিগ্রি কলেজ ১৮টি।
কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় কারিগরিতে দুই হাজার ৫৪৪ এবং মাদরাসায় এক হাজার ৩৫৯টিসহ মোট তিন হাজার ৯০৩টি আবেদন পাওয়া যায়। এর মধ্যে কারিগরিতে ২৯৫ ও মাদরাসায় ৩৫৩টিসহ মোট ৬৪৮টি প্রতিষ্ঠান যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। আর কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নীতিমালার ৩৬ ধারা এবং মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নীতিমালার ২২ ধারা প্রয়োগ করে ১৭ প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। তালিকা প্রকাশের পর রিভিউ করে আরও ২৫৫টি প্রতিষ্ঠানকে তালিকায় যুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশ ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাহামুদুনবী ডলার বলেন, এমপিওভুক্তির জন্য বর্তমানে স্কুল-কলেজ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলে সাড়ে তিন হাজার প্রতিষ্ঠান বাকি। এ বাবদ সরকারি পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। সে অর্থ দিয়ে বাদ পড়া সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা সম্ভব।
তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত না হওয়ায় অনেক শিক্ষক-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা ছাড়া কাজ করে আসছেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার মান বাড়াতে মানবিকভাবে বিবেচনা করে এবছর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব বিদ্যালয় এমপিওর আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
নীতিমালা অনুযায়ী, এমপিওভুক্তিতে চার শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে- প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পাসের হার। এসব বিষয়ের ওপর কাম্য যোগ্যতা হিসেবে ১০০ নম্বর ধার্য করা হয়েছে। নম্বরে এগিয়ে থাকা বিদ্যালয়গুলোকে এমপিওভুক্ত করা হবে। তবে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে হাওর-বাওড়, চরাঞ্চল, সুবিধাবঞ্চিত এলাকা, নদী এলাকা, বালিকা বিদ্যালয়-কলেজগুলোকে।
বাছাই কমিটির আহŸায়ক অতিরিক্ত সচিব আবদুন নূর মুহম্মদ আল ফিরোজ বলেন, মাত্র কমিটি গঠন করা হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে একটি সভা করার চিন্তা করা হচ্ছে। সেখানে আবেদন শুরু, যাচাই-বাছাইসহ খসড়া তালিকা তৈরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাছাই কমিটি ধাপে ধাপে সভা করে তালিকা তৈরির কাজ শেষ করবে। এমপিওভুক্তির জন্য আগামী আগস্ট থেকে অনলাইন আবেদন কার্যক্রম শুরুর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।