জগন্নাথপুরে বাম্পার বোরো ধান পেয়ে আনন্দিত কৃষক-কৃষাণী

13

মো. শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর থেকে

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে এবার বাম্পার বোরো ধান পেয়ে কৃষক-কৃষাণীর মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। উপজেলাজুড়ে চলছে ধান উৎসব। চারদিকে শুধু ধান আর ধান। লক্ষ্যমাত্রার অধিক ফসল পেয়ে কৃষকক‚লে রীতিমতো আনন্দের বন্যা বইছে। তবে হাইব্রিড ধান বাম্পার হলেও আগাম জাতের উপসী ধান ভাল হয়নি। এতে অধিকাংশ কৃষকরা আনন্দিত হলেও কিছু কৃষকের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
জানাগেছে, এবার জগন্নাথপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় নলুয়ার হাওর সহ সকল হাওর-বাওরের ২০ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়। এতে সরকারি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ টনের কম হলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এবার শুরু থেকে সকল প্রস্তুতি সন্তোষজনক ছিল। যে কারণে ফলাফল আশা থেকে অনেক বেশি হয়েছে। ধান রোপন থেকে কাটা পর্যন্ত জগন্নাথপুর কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সব ধরণের পরামর্শ সহ সার্বিক সহযোগিতা করেন। এছাড়া আগাম বন্যা থেকে বোরো ফসল রক্ষায় মানসম্মত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। অন্য বছরের তুলনায় এবার বাঁধের কাজ ভালো হওয়ায় কৃষকরা সন্তোষ ছিলেন।
ধানকাটা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ২০০টি ধানকাটার মেশিন হাওরে ছিল। যে কারণে কোন প্রকার শ্রমিক সংকট হয়নি। মেশিন ও শ্রমিক মিলে দ্রæত ধানকাটা শেষ করেন। বৈশাখের শুরুতে ধানকাটার ধুম পড়ে হাওরে। তখন ছিল কাঠফাটা রোদ। ধান কাটা শেষ হলেই রোদে শুকিয়ে দ্রæত গোলায় তোলা সম্ভব হয়েছে। যে কারণে এবার অল্প সময়ের মধ্যেই কৃষকরা তাদের কষ্টার্জিত সোনালি ধান সহজে গোলায় তুলতে পেরেছেন।
১ মে সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, নলুয়ার হাওরজুড়ে সব ধান কাটা হয়ে গেছে। হাওরে পড়ে থাকা কাটা ধানের ডগা থেকে ডেমি ধান কুড়িয়ে নিচ্ছেন দরিদ্র পরিবারের মানুষজন। হাওর পারের গ্রাম ভ‚রাখালি ও দাসনোয়াগাঁও গ্রামের পাশে থাকা খলায় শুধু ধান আর ধান। কৃষক-কৃষাণীরা ধান শুকাতে ও বস্তাবন্দি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। খলার আশপাশে দেখা যায়, ধান কিনতে আসা ব্যাপারিদের আনাগোনা। তারা কৃষকদের কাছ থেকে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা মণ দরে শুকনো ধান কিনে নিচ্ছেন। কৃষকরা আর্থিক অভাবে পরে ও এবার বেশি ধান পাওয়ায় মনের আনন্দে কিছু ধান বিক্রি করছেন। এর আগে মাড়াই করা কাঁচা ধান ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে হাওরে। যদিও এসব ধান উপজেলা সদরে থাকা ব্যবসায়ীরা কিনছেন ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা মণ দরে। তাছাড়া সরকার কিনবে ১২০০ টাকায়।
এ সময় দাসনোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক সাবেক ইউপি সদস্য রণধীর কান্তি দাস রান্টু বলেন, দরিদ্র কৃষকরা টাকার অভাবে খলা থেকে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীদের কাছে। যদিও পরে বিক্রি করলে বাড়তি দাম পাওয়া যেত। এখন কিছু ধান বিক্রি করে তারা বাজার খরচের টাকা জোগার করছেন। তিনি বলেন, এবার হাইব্রিড ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকক‚লে আনন্দের বন্যা বইছে। তাই অল্প ধান বিক্রি করলে কোন সমস্যা হবে না। ভ‚রাখালি গ্রামের কৃষকনেতা সাইদুর রহমান বলেন, এবার হাইব্রিড ধানের বাম্পার ফলন হলেও আগাম জাতের ধান নষ্ট হয়ে যায়। এতে অধিকাংশ কৃষকরা আনন্দিত হলেও কিছু কুষক হতাশায় ভ‚গছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলায় ইতোমধ্যে ৯৩ ভাগ ধানকাটা শেষ হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পুরো ধানকাটা শেষ হয়ে যাবে। এবার সবকিছু ভালো হওয়ায় কৃষকদের গোলায় বাম্পার ফলন উঠেছে। এবার ধানের ফলনে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। ধানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। সব মিলিয়ে কৃষকরা খুব খুশি হয়েছেন। এটাই আমাদের স্বার্থকতা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাইব্রিড ধান বাম্পার হলেও উপসী জাতের ধানে কিছু সমস্যা হয়েছে। যদিও হাইব্রিডের ধানে উপসীর ক্ষতি অনেকটা পূরণ হওয়ায় কৃষকরা সন্তোষ প্রকাশ করছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাজেদুল ইসলাম বলেন, এবার সরকারি নির্দেশনা মেনে চলায় কৃষকরাই লাভবান হয়েছেন। এবার শুরু থেকে সকল প্রস্তুতি ছিল ভালো। ধান রোপন থেকে কাটা পর্যন্ত প্রকৃতি অনুকুলে ছিল। অন্য বছরের তুলনায় হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ ছিল সন্তোষজনক। হাওরে ধান কাটার যন্ত্র ও শ্রমিক ছিল পর্যাপ্ত। যে কারণে দ্রæত সময়ের মধ্যেই জমির ধান গোলায় তুলতে পেরেছেন কৃষকরা। সব মিলিয়ে সরকার সহ সকলের প্রচেষ্টায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ফলন কৃষকদের গোলায় উঠেছে। এতে কৃষকদের সাথে আমরাও আনন্দিত।