কৃষ্ণচ‚ড়ার রঙে সেজেছে সড়ক

13

পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ

সড়কের দুই পাশে চা বাগানে ঘন সবুজ। সেই সবুজকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে মাথার উপরে থাকা কৃষ্ণচ‚ড়া। কোথাও চুলের বাতাসে দুলছে ফুলেল ডালপালা, কোথাও আবার রাস্তার মধ্যে পড়ে বিছানার মতো সৌন্দর্য বিলাচ্ছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে কৃষ্ণচ‚ড়ার মনকাড়া সৌন্দর্য। সবুজ চিকন পাতা। ফাঁকে লাল লাল কৃষ্ণচ‚ড়া ফুল। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। কৃষ্ণচ‚ড়ার লাল, কমলা, হলুদ ফুল এবং উজ্জ্বল সবুজ পাতা এক অন্যরকম দৃষ্টিনন্দন শোভা। ঠিক এমনি প্রকৃতি অপরূপ লাল টুকটুকে কৃষ্ণচ‚ড়ার ফুলের সাজে সাজিয়ে তুলেছে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়ক।
সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এ দুই মাস নিয়েই গ্রীষ্মকাল। আর গ্রীষ্মের ফুলের কথা বলতেই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে কৃষ্ণচ‚ড়ার কথা। সুমিষ্ট রসাল ফলের জন্য গ্রীষ্মকাল এগিয়ে রয়েছে, তবে ফুলের দিক থেকেও অন্যসব ঋতুর তুলনায় এগিয়ে রয়েছে গ্রীষ্মকাল। তাই গ্রীষ্মকালকেও ফুল উৎসবের ঋতু বলা যায়।
কৃষ্ণচ‚ড়ার ঐশ্বর্য, তার রঙের উজ্জ্বলতা অন্য ফুলকেও যেন হার মানিয়েছে। কৃষ্ণচ‚ড়া যে কাউকে দিয়ে যাচ্ছে অন্যরকম এক ভালোলাগা। প্রকৃতি যখন প্রখর রোদে পুড়ছে গ্রীষ্মের খরতাপে, কৃষ্ণচ‚ড়া ফুল তখন জানান দিতে শুরু করেছে তার সৌন্দর্য্যরে বার্তা। গ্রীষ্মের এই নিষ্প্রাণ রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতিতে কৃষ্ণচ‚ড়া নিজেকে মেলে ধরছে আপন মহিমায়। যেন লাল রঙে কৃষ্ণচ‚ড়ার পসরা সাজিয়ে বসে আছে প্রকৃতি, যে কারো চোখে এনে দেয় শিল্পের দ্যোতনা।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়ক, কমলগঞ্জ সদর হাসপাতাল, সিন্দুরখান সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকৃতিতেও এখন কৃষ্ণচ‚ড়ার রঙ্গিন সুবাস বইছে। এ সুবাস ছুঁয়ে যাচ্ছে ফুল ও প্রকৃতি প্রেমি মানুষের হৃদয়। পাখির ডানায়, হাওয়ায়-হাওয়ায় উড়ছে তার লাবণ্য। গাছে গাছে রক্তিম আভা নিয়ে জেগে থাকা কৃষ্ণচ‚ড়া দৃষ্টি কাড়ছে প্রকৃতিপ্রেমি মানুষদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি এলাকার কোথাও না কোথাও কৃষ্ণচ‚ড়ার বংশ মিলেছে। ইট-পাথরের মাঝেও গ্রীষ্মের চোখ জুড়ানো কৃষ্ণচ‚ড়া ফুল বাঙালির মনকে নাড়া দেয় গভীরভাবে। আর গ্রামে-গঞ্জে গেলেও কিছুক্ষণ পর পর দেখা মিলবে গ্রীষ্মের এ রাজার।
প্রকৃতিপ্রেমি মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষ্ণচ‚ড়া একটি জনপ্রিয় ফুল। নানা বৈশিষ্ট্যে দৃষ্টিনন্দন এ ফুলের কদর রয়েছে সব মহলেই। বিশেষ করে বাংলা কাব্য, সাহিত্য, সংগীত ও বিভিন্ন উপমায় কৃষ্ণচ‚ড়া ফুলের কথা বিস্তরভাবে উঠে এসেছে। ফুলটির রং এত তীব্র যে অনেক দূর থেকেই চোখে পড়ে। হঠাৎ দূর থেকে দেখলে মনে হবে, কৃষ্ণচ‚ড়া গাছে যেন লাল রঙের আগুন লেগেছে।
স্বাধীনতার রূপক ও চেতনার অর্থে ফুলটিকে ব্যবহার করেছেন অনেক কবি, সাহিত্যিক। শুধু কবি নয়, পথচারী থেকে শুরু করে সব শ্রেণি পেশার ফুলপ্রেমিদের আনন্দ ও মন কেড়েছে গ্রীষ্মের রাজা কৃষ্ণচ‚ড়া। রঙে, রূপে, উজ্জ্বলতা ও কমনীয়তায় কোনও কিছুই যেন কৃষ্ণচ‚ড়ার সমকক্ষ নয়। কৃষ্ণচ‚ড়ার সৌন্দর্যে একবারের জন্য হলেও দৃষ্টি আটকে যায় না কিংবা থমকে দাঁড়ায় না- এমনটা হতেই পারে না।
কৃষ্ণচ‚ড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। এটি ফাবাসিয়ি গোত্রের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ যার গুলমোহর নামেও পরিচিতি রয়েছে। বসন্তের শেষ দিকে সাধারণত কৃষ্ণচ‚ড়ার পাতা ঝরে পড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে পত্রহীন বাঁকানো ডালগুলোতে দেখা যায় কলির আভাস। অন্যান্য ফুল গাছে যখন নতুন পাতা আসে কিন্তু ফুল আসে না, ঠিক তখনই কৃষ্ণচ‚ড়ার সব পাতা ঝরে গিয়ে ফুলের কলি দেখা দেয়। আর গ্রীষ্মের শুরুতেই দেখা যায় লালের আভাস।