আড়াই মাস থেকে আটকে আছে ৩৭ হাজার শিক্ষকের বেতন

25

কাজির বাজার ডেস্ক

বিজ্ঞপ্তির প্রায় দেড় বছর পর নিয়োগ পাওয়া প্রাথমিক ও প্রাক প্রাথমিকের ৩৭ হাজার শিক্ষকের বেতন আটকে আছে। যোগদান করার আড়াই মাসেও তাদের বেতন ছাড় করতে পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে বেতন না হওয়ায় ঈদ বোনাস ও বৈশাখ ভাতাও আটকে গেছে তাদের। ঈদের আগে বৈশাখী ভাতা এবং ঈদ বোনাস ছাড়ের তোড়জোড় চলছে। শেষ পর্যন্ত এটিও সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন শিক্ষকরা। এজন্য মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরকে আর অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করছে।
চাকরিতে যোগ দিলাম আড়াই মাস। এখন পর্যন্ত বেতন হয়নি। সামনে ঈদ। এখন ঈদ বোনাস যদি না পাই তাহলে সংসারে মুখ দেখাব কীভাবে।
জানা গেছে, চলতি বছর দেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সার্কুলারে একবারে প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের আড়াই মাসেও শিক্ষকদের বেতন শিট তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে দেশজুড়ে শিক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেওয়ায় এবং তা নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডিপিই ও অর্থ মন্ত্রণালয় বৈঠকে বসতে যাচ্ছে আগামীকাল রোববার। এ বৈঠকে ঈদের আগে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদান নিয়ে আলোচনা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে শিক্ষকদের দাবির মুখে ঈদের আগে ঈদ বোনাস ও বৈশাখী ভাতা ছাড়ের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ঈদের ১৫ দিন আগে তথ্য সংগ্রহে মাঠে নেমেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ করে ঈদের আগে আদৌ ভাতা ও বোনাস দেওয়া যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা।
গত সোমবার (৩ এপ্রিল) অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ) এইচ এম আবুল বাশার সব জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে সাত ধরনের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে প্রত্যেক জেলায় সদ্য যোগ দেওয়া শিক্ষক সংখ্যা, গত ঈদুল আজহায় কত সংখ্যক শিক্ষক উৎসব ভাতা পেয়েছেন, শিক্ষা ভাতাপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রকৃত সংখ্যাসহ সাত ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
শিক্ষকরা জানান, শেষ সময়ে এসে এ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে আদৌ উৎসব ভাতা দেওয়া সম্ভব হবে না। ঈদের আগে এ ভাতা না পেলে পরে তা পাওয়ায় নজির নেই।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এজন্য মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করছে। তাদের ভাষ্য, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কিছু তথ্য চাওয়া হয়। সে তথ্য সরবরাহ না করায় অর্থ মন্ত্রণালয় বেতন ভাতা ছাড় করেনি। মন্ত্রণালয় বলছে, অধিদপ্তর যে তথ্য দিয়েছে সেখানে কিছু গরমিল পাওয়া গেছে। এ তথ্য বারবার চাওয়ার পরেও অধিদপ্তর সেসব তথ্য দিতে পারেনি। সেজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সম্ভব হয়নি।
এদিকে নতুন করে যোগ দেওয়া শিক্ষকরা বেতন ভাতা না পেয়ে অসহায় দিন যাপন করছেন। কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলা শারমিন আক্তার নামে এক শিক্ষক বলেন, চাকরিতে যোগ দিলাম আড়াই মাস। এখন পর্যন্ত বেতন হয়নি। সামনে ঈদ। এখন ঈদ বোনাস যদি না পাই তাহলে সংসারে মুখ দেখাব কীভাবে। তিনি বলেন, বিষয়টি উপজেলা ও শিক্ষা অফিসের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তারা বলছেন, অর্থ ছাড় হয়েছে। কিন্তু কবে শিক্ষকরা বেতন পাবেন তারা সেটা জানেন না। নতুন যোগদান করা শিক্ষকরাও একাধিকবার ফোন করে তাদের বেতনের তথ্য জানতে চাচ্ছেন কিন্তু তারা কোনো নির্দিষ্ট তারিখ জানাতে পারছেন না।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মকর্তারা বলছেন, এ শিক্ষকদের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের বেতন ছাড় করেছে ডিপিই। মোট ছাড়কৃত অর্থের পরিমাণ ২৫৯ কোটি ৫৭ লাখ ১১ হাজার। এর মধ্যে মূল বেতন প্রায় ১৪০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, বাড়ি ভাড়া প্রায় ৬৩ কোটি ৫১ লাখ, চিকিৎসা ভাতা প্রায় ১৯ কোটি ১৯ লাখ, উৎসব ভাতা প্রায় ২৬ কোটি ৫৬ লাখ, নববর্ষ ভাতা প্রায় পাঁচ কোটি ৩১ লাখ, টিফিন ভাতা প্রায় দুই কোটি ৫৫ লাখ, শিক্ষা ভাতা প্রায় ৭৩ লাখ, যাতায়াত ভাতা প্রায় সাত লাখ ৬৬ হাজার ও হাওর/দ্বীপ/চর ভাতা ৮৫ লাখ টাকা।
কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় এই টাকা ছাড় করেনি। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এজন্য মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করছে। তাদের ভাষ্য, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কিছু তথ্য চাওয়া হয়। সে তথ্য সরবরাহ না করায় অর্থ মন্ত্রণালয় বেতন ভাতা ছাড় করেনি। মন্ত্রণালয় বলছে. অধিদপ্তর যে তথ্য দিয়েছে সেখানে কিছু গরমিল পাওয়া গেছে। এ তথ্য বারবার চাওয়ার পরেও অধিদপ্তর সেসব তথ্য দিতে পারেনি। সেজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বাজেট শাখার কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ডিপিইউপ পরিচালক (অর্থ) এইচ এম আবুল বাশার বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য চাওয়া হয়েছে তা যথাসময়ে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাঠানো হয়েছে।
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা নার্গিস আক্তার জানান, তার উপজেলায় রাজস্ব খাতের শিক্ষকদের বেতন বোনাস দেওয়া হলেও প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন দেওয়া যায়নি। আইবাস প্লাসে বরাদ্দের টাকা আসলেও কোড সংক্রান্ত জটিলতায় প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি।