হাওরের ধানে ব্লাস্টের প্রাদুর্ভাব

12

 

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

হবিগঞ্জে বোরো ধানে বøাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে ব্রি-২৮ জাতের ধান। কাটার মৌসুমে এসে দেখা যাচ্ছে কোনো ধানেই চাল নেই। আছে শুধু খোসা। চারাসহ ধানগুলো সাদা হয়ে গেছে। সব হারিয়ে এখন পরিবার পরিজন নিয়ে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে কৃষকদের। সরেজমিনে বিভিন্ন হাওর ঘুরে জানা যায়, ব্রি-২৮ জাতের ধান অনেকটাই সরু। চালও সরু হয়। খেতেও সুস্বাদু। ফলনও ভালো হয়। এক বিঘা জমিতে অন্তত ২০ মণ ধান ফলে। তাছাড়া অন্যান্য ধানের চেয়ে এটি আগে কাটা যায়। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগও এটিকে তেমন ক্ষতি করতে পারে না। আবার বিক্রি করতে গেলে বাজারে এর দামও বেশি মেলে। তাই এর প্রতি কৃষকদের আগ্রহ অনেক বেশি। হবিগঞ্জ সদর, লাখাই, বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ, মাধবপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা হাওরবেষ্টিত। হাওর এলাকার প্রায় সবাই কৃষির উপর নির্ভরশীল। কেউ নিজের জমিতে আবার কেউ অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করেন।
এ বছর জেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে। এর মাঝে হাওরের একটি বৃহৎ অংশে কৃষকরা ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ করেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে কাটার সময় ধানে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বøাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে গেছে হাওরের পর হাওর ধান। গাছসহ ধান সাদা হয়ে গেছে। ভেতরে কোনো আঁশ নেই। পুরোটাই খোসা। এগুলো এখন জ্বালানি হিসেবে (থেকে ঋণ করে এনে চাষ করেছেন। এখন তিনি পথে বসার উপক্রম।
ইউছুপুর গ্রামের কৃষক শামীম মিয়া জানান, এভাবে দুর্যোগ আসবে তাঁরা ভাবতেও পারেননি। তিনি বলেন, পুরো ধানের ছড়ার প্রায় ৯০ ভাগ ধান চিটা। ১০ ভাগ ভালো থাকলেও কাটানো ও মাড়াই খরচ দিয়ে তা কৃষকদের ক্ষতিই বাড়াবে। যে কারণে অনেকে তা কেটে নিয়ে গরুকে খাওয়াচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান, শ্রীমঙ্গলে ১১ হাজার ৪৫১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-২৮ আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৬৫১ হেক্টর। যার মধ্যে বেশ কিছু অংশ বøাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। যখন এটি প্রথম ধরা পড়ে, তখন পাতা একটু একটু মরতে শুরু করে। তখনই কৃষকদের দুই রাউন্ড ছত্রাক নাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ইউরিয়ার পরিবর্তে পটাশিয়াম সার ব্যবহারের পরামর্শ দেন। অনেক কৃষক এই অল্প পাতা মরায় কিছু হবে না ভেবে ছত্রাকনাশক স্প্রে করেননি। কেউ কেউ এক রাউন্ড স্প্রে করেছেন। কিন্তু যাঁরা ঠিকমতো নিয়ম মেনেছেন, তাঁদের ফসল নষ্ট হয়নি।
শ্রীমঙ্গল কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রকেন্দ্র শর্মা জানান, তাঁদের অনুসন্ধান অনুযায়ী ১৬৮ বিঘা জমিতে বøাস্ট রোগে আক্রমণের উপস্থিতি পান। বিষয়টি লক্ষ্য করার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের এ থেকে উত্তরণের পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী ১০০ বিঘার বেশি জমির ধান নষ্ট হয়নি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, মৌলভীবাজারের হাইল হাওর, কাউয়াদিঘি হাওর ও হাকালুকি হাওরের নিচু এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় আট হেক্টর এলাকায় বি-২৮ জাতের ধান ও বি-৪৮ জাতের ধান নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে এটি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান উৎপাদনে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাঁদের সহায়তার জন্য সরকারের কোনো বরাদ্দ এলে তাঁরা পাবেন।