কাজির বাজার ডেস্ক
আটটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। মালিকানা নিয়ে দ্ব›দ্ব, অবৈধভাবে ক্যাম্পাস পরিচালনা, নির্ধারিত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়াসহ নানা অনিয়মের ভিত্তিতে এ নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে ইউজিসি।
এর মধ্যে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১ জানুয়ারি থেকে নিষেধাজ্ঞা চলছে। বাকি চারটিতে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে শিগগিরই একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। নিষেধাজ্ঞাভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (কুমিল্লা), স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, আশা ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি।
এর মধ্যে অবৈধভাবে ক্যাম্পাস পরিচালনার দায়ে প্রথম তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে ইউজিসি। বাকিগুলোতে ট্রাস্টি বোর্ডের দ্ব›দ্ব, নির্ধারিত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়াসহ নানা অনিয়ম রয়েছে। শিগগিরই গণবিজ্ঞপ্তিটি গণমাধ্যমে ও ইউজিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ওমর ফারুক বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা যেন সচেতন থাকেন এবং জেনে-শুনে তাদের সন্তানদের ভর্তি করাতে পারেন সেজন্য প্রতি সেমিস্টারের আগে এ ধরনের গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। গণবিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপচার্য, প্রো-উপচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অভিহিত করা হবে।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে অনুমোদিত ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে মঞ্জুরি কমিশনের অনুমতি নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ১০২টি। রাষ্ট্রপতি (চ্যান্সেলর) নিয়োগকৃত ভিসি (উপাচার্য) রয়েছে ৭০টিতে। বাকি ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোক্তাদের নিয়োগ করা উপাচার্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ অনুমোদন হওয়া গণবিজ্ঞপ্তিতে মোট আটটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করবে ইউজিসি। এর মধ্যে তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘অবৈধ’ আর পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হবে। এর বাইরে আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার তথ্য গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করবে ইউজিসি।
অনুমোদিত গণবিজ্ঞপ্তিতে ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ও দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার ব্যাপারে বলা হয়েছে, এ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কোনো ক্যাম্পাস, ঠিকানা, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত কোনো উপচার্য, প্রো-উপচার্য ও ট্রেজারার নেই। অর্থাৎ বৈধ কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালানোর আর কোনো ‘আইনগত ভিত্তি’ নেই। ফলে এ তিন ইউনিভার্সিটির একাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, পরীক্ষা ও ফলাফল এবং ‘একাডেমিক সনদের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই’।
গণবিজ্ঞপ্তিতে কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে ইউজিসি বলেছে, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সাল থেকে চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত ভিসি এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নেই। বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতি, অপ্রতুল শিক্ষক সংখ্যা, যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, শিক্ষা সহায়ক ক্যাম্পাসের অনুপস্থিতি, লাইব্রেরিতে প্রয়োজনীয় পাঠ্যবইয়ের অপ্রতুলতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কারিকুলাম মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কমিশন কর্তৃক পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে। অন্যদিকে, নির্ধারিত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ায় স্টামফোর্ড, ভিক্টোরিয়া, আশা এবং প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটিতে ১ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রয়েছে। যা আগামীতে অব্যাহত থাকবে। ইবাইস, সেন্ট্রাল ইউনির্ভাসিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও ব্রিটেনিয়া ইউনিভার্সিটিতে (কুমিল্লা) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের দ্ব›দ্ব রয়েছে। এর বাইরে একাধিক ব্যক্তি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন। যা এখনও বিচারাধীন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে অনুমোদিত ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে কমিশনের অনুমতিক্রমে ১০২টি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে কমিশনের ওয়েবসাইট (িি.িঁমপ.মড়া.নফ) দেখে অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ক্যাম্পাস এবং অনুমোদিত প্রোগ্রামে কমিশন নির্ধারিত আসন সংখ্যা অনুযায়ী ভর্তি হওয়ার পরামর্শ ইউজিসির।
সবাইকে সতর্ক করে গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ ও কমিশনের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে অননুমোদিত ক্যাম্পাস, অননুমোদিত প্রোগ্রাম বা অনুমোদিত প্রোগ্রামে কমিশন নির্ধারিত আসন সংখ্যার বিপরীতে অতিরিক্ত আসনে শিক্ষার্থী ভর্তিপূর্বক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অননুমোদিত/অবৈধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকার জন্য কমিশন থেকে ইতোমধ্যে একাধিকবার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
ইউজিসির গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অর্জিত ডিগ্রির মূল সার্টিফিকেটে স্বাক্ষরকারী হবেন রাষ্ট্রপতি তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য কর্তৃক নিয়োগকৃত উপচার্য এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। বর্তমানের ৩৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপচার্য নেই। এছাড়াও যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে সেগুলোতে তারকা স্টার (*) চিহ্ন দেওয়া আছে। এরপরও কোনো শিক্ষার্থী অননুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত ক্যাম্পাস, অননুমোদিত প্রোগ্রামে বা অনুমোদিত প্রোগ্রামে কমিশন নির্ধারিত আসন সংখ্যার বিপরীতে অতিরিক্ত আসনে ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে এর দায়ভার মঞ্জুরি কমিশন নেবে না।
কমিশন বলছে, এর আগেও এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল।
ইউজিসি বলছে, পর্যাপ্ত তথ্য না নিয়ে কোনো শিক্ষার্থী এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে পরবর্তীতে কোনো আইনগত সমস্যা সৃষ্টি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ অথবা প্রোগ্রাম বাতিল হলে বা অনুমোদিত আসন সংখ্যার অধিক আসনে ভর্তি হয়ে সনদ বাতিল হলে তার দায়দায়িত্ব বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওপর বর্তাবে না। সবাইকে ইউজিসির ওয়েবসাইট (িি.িঁমপ.মড়া.নফ) থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ভর্তি হওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হলো।