জেলা বা উপজেলায় সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। একেকটি হাসপাতাল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে বহু কোটি টাকা। আরো বহু কোটি টাকার সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য। হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া জনবলের পেছনে বড় ধরনের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তারপর সেই হাসপাতাল জনগণকে কতটা সেবা দিচ্ছে।
দেখা যায়, দুপুর একটা-দেড়টার মধ্যেই হাসপাতালের পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তারও আগে বন্ধ হয়ে যায় টিকিট বিক্রি। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেক রোগীকে চিকিৎসা ছাড়াই ফিরে যেতে হয়। এই বিপুল রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সরকার একটি উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে দেশের ১০টি জেলা ও ২০টি উপজেলা হাসপাতালে বৈকালিক সেবা চালু করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এটি সারা দেশের সব সরকারি হাসপাতালে চালু করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে একটি সঠিক ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত বলেই মনে করা হচ্ছে।
সরকারি হাসপাতালে বরাবরই সেবাপ্রত্যাশী রোগীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। লাইনের শেষে থাকা অনেকেই সেবা না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে গিয়ে গলাকাটা মূল্যে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়। এখন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবারও তারা চিকিৎসক দেখাতে পারবে। এ জন্য তাদের কিছুটা মূল্য দিতে হবে। বৈকালিক সেবায় কোনো অধ্যাপকের পরামর্শ নিলে একজন রোগীকে ৫০০ টাকা ফি দিতে হবে। সিনিয়র কনসালট্যান্টকে ৪০০ টাকা এবং সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ের চিকিৎসককে দিতে হবে ৩০০ টাকা। এটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। বৈকালিক সেবায় রোগী দেখায় চিকিৎসককে সহায়তা করবেন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও নার্সরা। রোগী যে ফি দেবে তার ৫০ শতাংশ পাবেন চিকিৎসক।
বাকি ৫০ শতাংশ যাবে হাসপাতালের তহবিলে অন্যান্য খরচ বাবদ। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। চিকিৎসাসংক্রান্ত নীতিনির্ধারকরাও এই ধারণাটি এগিয়ে নিতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এ ক্ষেত্রে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। অবশেষে থেকে ১০টি জেলা ও ২০টি উপজেলা হাসপাতালে সেই সেবা চালু করা হলো।
বহু রোগী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে এবং বেসরকারি হাসপাতালে খরচ জোগাতে না পেরে হয় বিনা চিকিৎসায় থাকে, না হয় হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে যায়। এতে তাদের স্বাস্থ্য সমস্যা আরো প্রকট হয়। দুবেলা চিকিৎসা দেওয়া হলে দ্বিগুণসংখ্যক রোগী সরকারি হাসপাতালের সেবা পাবে। আমরা আশা করি শিগগির দেশের সব সরকারি হাসপাতাল এই কার্যক্রমের আওতায় আসবে। একই সঙ্গে বৈকালিক সেবার সময় আরো কিছুটা বাড়ানো যায় কি না তা বিবেচনা করতে হবে।