ইভিএম নিয়ে অন্ধকারে ইসি

5

কাজিরবাজার ডেস্ক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে অন্ধকারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেননা, হাতে থাকা মেশিনগুলো ব্যবহারযোগ্য করতেই প্রয়োজন এক হাজার ২৬০ কোটি টাকা। নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সোমবার নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে কী হবে না হবে জানি না। উই আর ইন ডার্ক (আমরা অন্ধকারে)। গত ১৫ মার্চের কমিশন বৈঠকে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটা চিঠি দেওয়ার জন্য বলেছি। এক হাজার ২৬০ কোটি টাকার মতো লাগবে এক লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামত করার জন্য। সেটা পাওয়া যাবে কি না, নিশ্চিত করার আমরা একটা চিঠি দিতে বলেছি। তা রেডি হয়েছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) যেতে পারে। কেন এই চিঠি দিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাকার নিশ্চয়তা আমরা এখনো পাইনি। কাজেই টাকার নিশ্চয়তা না পেয়ে কাজ করে শেষ পর্যন্ত দিতে পারব না টাকা, সেটা তো ঠিক হবে না। এই অর্থবছরে অর্ধেক, পরের অর্থবছরে বাকি অর্ধেক- এরকম একটা প্রস্তাব আমরা পাঠাচ্ছি। যদি অর্থ বিভাগ টাকা সংস্থান করে তাহলে আমরা ইভিএমের বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হব। অন্যথায় যদি টাকা না পাওয়া যায়, তাতেও আমাদের সিদ্ধান্তে আসতে হবে যে কী করব। ব্যালটে কতটা করব বা ইভিএমে আদৌ করবো কি না। সবটাই নির্ভর করবে অর্থপ্রাপ্তির ওপর।
কবে নাগাদ এই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন- এমন প্রশ্নে এই কমিশনার বলেন, আমরা তো অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বসে থাকতে পারব না। যদি টাকা হাতে পাই, সেক্ষেত্রে ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) বলেছে যে, তাদের ছয় মাস সময় দিতে হবে মেরামত করার জন্য। কাজেই আমরা তো মনে করি এখনই হাই টাইম। এই কমিশনার আরও বলেন, যদি আমরা আগামী কিছুদিনের মধ্যেই (চিঠির জবাব) পেয়ে যাই, আগামী সপ্তাহে বা তার পরের সপ্তাহে বা এর পরের সপ্তাহেও যদি পেয়ে যাই, তাহলে কিন্তু হাতে ছয় মাস সময় পাব। অন্যথায় কিন্তু সময় পাব না। ছয় মাস সময়ের পরে টাকা দিলে তো আমাদের লাভ হবে না। কারণ এক লাখ ১০ হাজার মেশিন যদি আমরা ব্যবহারযোগ্য করতে পারি, তাহলে ৭০-৮০ যে সংখ্যাটা (আসন) হয়, আমরা যেতে পারব। না হলে তো পারব না। করব কি না, তা পরে সিদ্ধান্ত নেব। আশা করছি, হয়তো টাকার ব্যবস্থা করবে সরকার। কীভাবে করবে তা …।
আনিছুর রহমান বলেন, এখনো সরকার তো পুরোপুরি না করেনি। আমরা এটুকু ইঙ্গিত পেয়েছিলাম, যে টাকার একটা ব্যবস্থা হবে। সেজন্যই সর্বশেষ একটা চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সরকার কোনো বরাদ্দ না দিলে কী করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আবার কমিশনে আসবে এটা। কমিশন তখন যে সিদ্ধান্ত নেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। তা এখন বলার সুযোগ নেই।
কতগুলো আসনে ইভিএমে ভোট করতে পারবেন- এই প্রশ্নের উত্তরে কমিশনার বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত পর্যালোচনা করে দেখিনি। যেগুলো আমাদের হাতে আছে, এক লাখ ১০ হাজার মেরামতযোগ্য, আর ৪০ হাজার মেরামত করলেও ব্যবহারযোগ্য হবে না। কাজেই আমরা এক লাখ ১০ হাজারই মেরামত করব। যদি আংশিক পাওয়া যায় বা কী হবে সেই সিদ্ধান্ত হয়, সেটার ওপর নির্ভর করবে কত আসন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেড় লাখ ইভিএম মেশিন কিনেছিল তৎকালীন কেএম নূরুল হুদা কমিশন। সে সময় জাতীয় নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করেছিল তারা। বাকিগুলো বিভিন্ন আসনের উপ-নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনে ব্যবহার করা হয়।
কিছু মেশিন বিএমটিএফের ওয়্যারহাউজে সংরক্ষিত আছে। সব মিলিয়ে এক লাখ ১০ হাজার মেশিন ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে হবে। সেগুলোই এখন মেরামত করার ওপর নির্ভর করবে সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারযোগ্য মেশিনের সংখ্যা। আর এটি নির্ভর করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বরাদ্দের ওপর।
কাজী হাবিবুল আউয়াল গত বছর ফেব্রæয়ারিতে দায়িত্বে নেওয়ার পর বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নেন। সেজন্য প্রায় চার লাখ মেশিনের প্রয়োজন পড়ে। এতে আরও দুই লাখ মেশিন কেনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশন আট হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার নতুন একটি প্রস্তাব দেয় সরকারের কাছে। কিন্তু বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের কারণ দেখিয়ে প্রকল্প প্রস্তাবটি ‘আপাতত স্থগিত’ রাখার সিদ্ধান্ত জানায় পরিকল্পনা কমিশন। এই অবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠিক কতটি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।