রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন হোক

28

চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে রমজান মাস। গত বছর এ সময় চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছিল সাধারণ মানুষ। প্রতি বছর ফেব্রæয়ারি মাস থেকে সেচ মৌসুম শুরু হয়ে মে মাস পর্যন্ত চালু থাকে। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এ সময়টাতেই থাকে গ্রীষ্মকাল। রোজা শুরু হচ্ছে। সে হিসাবে মার্চ এবং এপ্রিল মাসে সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা থাকবে সর্বোচ্চ। জ্বালানির অভাবে গত বছর টানা কয়েক মাস লোডশেডিং চলেছে। গত বছর এপ্রিল মাসে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। আগামী সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদা বেশি থাকলেও গত বছর গড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, গ্রীষ্মে তারা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আশা করা হচ্ছে গ্যাস থেকে ৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট, ফার্নেস অয়েল থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াট, কয়লা থেকে ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট এবং অন্যান্য উৎস থেকে ১ হাজার মেগাওয়াটসহ মোট ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। এতে চাহিদা মিটবে। তবে এ লক্ষ্যপূরণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ না করতে পারলে সেচ কাজ ব্যাহত হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং শিল্প উৎপাদন ঠিক রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিকল্প নেই। এছাড়া রমজানে ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ না হলে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত পর্যাপ্ত জ¦ালানির সংস্থান করতে না পারলে লোডশেডিং এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। দেশে এখন বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার মেগাওয়াট। এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। বর্তমানে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এখনই উৎপাদন বাড়িয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী ডলার সংকটের কারণে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণে সরকারের সদিচ্ছা ও চেষ্টা রয়েছে। আমরা আশা করি এমন পরিস্থিতি থেকে দ্রæতই বেরিয়ে আসবে দেশ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় বাধা জ্বালানি সংকট। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে সময়মতো পর্যাপ্ত জ¦ালানি আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রীষ্মে লোডশেডিং মোকাবিলায় সরকার ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রাখার যে পরিকল্পনা করেছিল তার মধ্যে রয়েছে পায়রা ও রামপাল কেন্দ্র। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা, কয়লার অভাবে এই দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কেবল তেল, গ্যাস ও কয়লার ওপর নির্ভর করলে চলবে না; জলবিদ্যুৎ, বায়ুকল, সৌরবিদ্যুৎ, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সম্ভাব্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্র নিয়ে ভাবতে হবে সরকারকে। দিন দিন বিদ্যুতের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে তাতে বিকল্প এসব ক্ষেত্র কাজে লাগানো ছাড়া উপায় নেই। জনসাধারণেরও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন ও মিতব্যয়ী হওয়া দরকার। বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ হলে তা সবার জন্যই সুফল বয়ে আনবে। মোটকথা, রমজানে জনভোগান্তি নিরসনে শহর ও গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে। এজন্য এখনই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে সরকারকে সুপরিকল্পিতভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।