কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের জনগণ আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে তার দল দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমি সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। সবসময় জনগণের খাদ্য ও ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছি। কখনোই ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাই না।’
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এ সময় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন আইন পাস হয়। তারপর সেই আইনের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ফলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। বর্তমান কমিশনের প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতাও রয়েছে। এ জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ভিত্তি নেই। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্ম তো ক্যান্টনমেন্টে হয়েছে।’
সামাজিক অর্থনৈতিক বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের এ পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়েছে। দেশে অব্যাহত গণতান্ত্রিক চর্চা ও স্থিতিশীলতার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।’
আলোচনায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও রোহিঙ্গা ইস্যুও উঠে আসে। যুদ্ধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত এ যুদ্ধ বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া। কারণ এর ফলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে এ বিরোধের মীমাংসা হতে পারে। যুদ্ধ কখনোই মানবজাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।’
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তারা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে আছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মাদকপাচার, মানবপাচার, সন্ত্রাসবাদ ও আন্তঃসহিংসতার মতো নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের কারণে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থানীয়দের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে। তাই এখন তাদের সেখানে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘সরকার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে আয়সংস্থানমূলক কাজসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছে। আমরা কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে।’
এসময় ভাসানচরে সহায়তা দেওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও অনুকূল পরিবেশে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলে বলেন, ‘মিয়ানমারে আবার কোনো গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় বসলে বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে। তবে বাস্তুচ্যূত এ জনগোষ্ঠীর (রোহিঙ্গা) প্রত্যাবাসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।’ একইসঙ্গে মানবিক কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
সাক্ষাৎকালে ডেরেক শোলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কিছু উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তার সফর দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্বের প্রতিফলন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।’
সাক্ষাৎকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস প্রমুখ।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সফরে আসেন। সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ২৪ ঘণ্টার সফর শেষে বুধবার রাতে বাংলাদেশ ছাড়বেন ডেরেক শোলে।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।