সিলেটে র‌্যাব-৯’র সংবাদ সম্মেলন ॥ কলেজ ছাত্রী সোনিয়ার হত্যাকারী মামাতো ভাই সজিব ঢাকায় গ্রেফতার

40

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর খুলিয়াটুলা এলাকায় কলেজ ছাত্রী সোনিয়া বেগম (২০) হত্যাকারী মামলার একমাত্র আসামি মো. সজিব আহমদকে (২৫) গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৯। গত সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত সজিব হবিগঞ্জ জেলার আজমেরীগঞ্জ উপজেলার শরীফনগর গ্রামের মো. নুরুদ্দিনের পুত্র। নিহত সোনিয়ার মামাতো ভাই সজিব। মঙ্গলবার দুপুরে নিহত সোনিয়ার বড় ভাই পারভেজ আহমদ বাদী হয়ে সজিবকে প্রধান আসামী করে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং-৩৩।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টায় র‌্যাব-৯ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অধিনায়ক উইং কমান্ডার মো. মোমিনুল হক জিডি-পি বলেন, ঘটনার আগের দিন ১১ ফেব্রুয়ারি সোনিয়া চাকরির সন্ধানে সজিবকে নিয়ে বিয়ানীবাজার যান। ঐদিন বিয়ানীবাজার থেকে ফেরার পথে সিলেট শহরের শেখঘাটে সোনিয়ার অসুস্থ খালাকে দেখে তারা রাত ১২টার দিকে বাসায় ফিরেন। তিনি জানান, ঘটনার ৭ দিন আগ থেকেই সোনিয়াদের বাসায় অবস্থান করছিলেন সজিব। এসময় তিনি সোনিয়াকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায়ও যান। রবিবার ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নগরীর শেখঘাট খুলিয়াটুলা আবাসিক এলাকার নীলিমা-১৪ নম্বর বাসা থেকে সোনিয়ার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কলাছড়া গ্রামের বিল্লাল আহমদের মেয়ে ও দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের ছাত্রী। তিনি মা ও সৎ বাবার সঙ্গে ওই বাসার ৪র্থ তলায় থাকতেন। সোনিয়া সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার নাটকে অভিনয় এবং মোবাইলভিত্তিক অ্যাপস টিকটক ও লাইকিতে ভিডিও করতেন।
পারিবারিক ও পুলিশ সূত্র জানায়, হত্যাকা-ের আগের সোনিয়াদের বাসায় রাত্রিযাপন করেন তার মামাতো ভাই সজিব। রবিবার সকালে পরিবারের অন্য সদস্যরা অসুস্থতার কারণে সোনিয়ার সৎ বাবা সেলিম মিয়াকে দেখতে হাসপাতালে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর সজিবও ওই বাসা থেকে বের হয়ে যান। পরে দুপুর ১২টার সোনিয়ার শয়নকক্ষে গিয়ে তার গলাকাটা লাশ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। প্রথম থেকেই সোনিয়ার পরিবারের দাবি ছিলো-এই হত্যাকা-ের সঙ্গে সজিব জড়িত। পুলিশের সন্দেহের তিরও ছিলো সজিবের দিকে। ঘটনার পর থেকে সজিব গা ঢাকা দেওয়ায় সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়। সোনিয়ার ঘর থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণলঙ্কারও খোয়া গেছে বলে দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাব-৯-ও ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে। তদন্তের এক পর্যায়ে র‌্যাব তথ্য যুক্তির সহায়তায় সজিবের অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরে সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৯’র সদস্যরা।
র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক মোমিনুল হক প্রেস ব্রিফিংকালে আরো জানান, প্রায় সময় সোনিয়াদের বাসায় আসতেন সজিব। তিনি তার গর্ভবতী স্ত্রীর চিকিৎসার কথা বলে গত ৭ দিন যাবৎ সোনিয়াদের বাসায় অবস্থান করেছিলেন। ঘটনার দিন সকালে সোনিয়ার সৎ বাবা অসুস্থ হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে যান তাকে। পরে হাসপাতাল হতে সোনিয়ার মা দুপুর ১২ টার দিকে বাসায় ফিরে সোনিয়াকে দেখতে না পেয়ে তার শয়নকক্ষে ঢুকে বিছানায় রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। সোনিয়ার লাশ গলার বাম পাশে কাটা এবং ডান হাতের কব্জির রগ কাটা পাওয়া যায়। পুলিশ এসময় তল্লাশি করে ঘটনাস্থলের খাটের তোষকের নিচ থেকে ধারালো রক্তমাখা একটি কাঁচি উদ্ধার করে।
র‌্যাব আরও জানায়, সজিবের নামে ঢাকার ভাষানটেক থানায় মামলা রয়েছে। মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে শিশু অপহরণ ও সহায়তার অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। এ মামলায় কারাভোগ করেছে সে।