কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধা আসে’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে সবাইকে আন্তরিকভাবে জনগণের সেবা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সরকার প্রধান বলেন, এটাই বাস্তব কথা যে জনগণের সেবক হওয়া; আজকে আমরাও যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি যতটুকু সুযোগ-সুবিধা পাই বা আপনারাও সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা পান এগুলোর অবদান তো জনগণের। কারণ জনগণের অর্থ ও ট্যাক্সের টাকা দিয়ে কিন্তু সবকিছু চলে।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুরে বক্তব্য থেকে উদ্বৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা পহেলা ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা, আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে।’
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যারা জনপ্রশাসনে কাজ করেন, মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন, আপনাদের দায়িত্ব অনেক। এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে শুধুমাত্র একটা চাকরি করা নয়, জনসেবা দেওয়া। যেজন্য আপনারা জানেন আমি এই মন্ত্রণালয়ের নামটাও পরিবর্তন করে দিয়েছি। এটা আগে ছিল সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, সেটাকে আমি জনপ্রশাসন নাম দিয়েছি। নামেরও একটা তাসির থাকে; নামের সঙ্গে যেন কর্মক্ষেত্র আপনাদের বিস্তৃত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের সময়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জনগণ সেবা করার আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়েছে। একটা পরিবর্তন আমি দেখেছি আপনাদের মাঝে। আমার বাবাও ক্ষমতায় ছিলেন, তখনও দেখেছি, আমি যখন বিরোধী দলে বা আমি যখন ৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসি যখন আমি সারা বাংলাদেশ ঘুরি তখনও দেখেছি। তবে এটুকু আমি গর্বের সাথে বলতে পারি আমি আসার পর থেকে আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে এই যে জনমুখী হওয়া, জনগণের পাশে দাঁড়ানো, জনগণের সেবা দেওয়ার আন্তরিকতাটা সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, আর এটা যদি না হত আজকে বাংলাদেশের উন্নয়নে আমরা যতটুকু কাজ করতে পেরেছি বা সফলতা পেয়েছি সেটা কিন্তু সম্ভব হতো না।
আশ্রায়ণে প্রকল্পে ঘর পাওয়া মানুষের ঘুরে দাঁড়ানো এবং তাদের মুখের হাসির কথা তুলে ধরে এটা নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের কাজের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, মানুষের হাসি, আমার মনে হয় এই দোয়াটা আপনারাও পাবেন। একটা মানুষ যার কিছুই ছিল না, সে আজকে একটা ঘর পেয়ে সব পাচ্ছে; এই দোয়াটাও আপনারা পাবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই সেভাবে মানুষের সেবায়, জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করে কাজ করবেন। কাজেও সন্তুষ্টি পাবেন, নিজেও আত্মতৃপ্তি পাবেন। মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে পারবেন সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমি মনে করি সেই লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে পারব।
মানুষকে অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী করতে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, জনগণকে যদি আমরা অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম করে তুলতে পারি যেটা আমাদের সব সময় লক্ষ্য। আপনারা দেখেছেন আমাদের প্রত্যেকটা পরিকল্পনা আমরা একেবারে তৃণমূল থেকে দেশকে উন্নত করে আনতে চাই এবং সেই প্রচেষ্টাই আমরা চালাচ্ছি।
জনমুখী প্রশাসন গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশকে তিনি একটা উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবেন, ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে একেবারে জনমুখী শাসনব্যবস্থা ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূলের জনগণের হাতে ক্ষমতা পৌঁছে দেওয়া।
তিনি বলেন, উন্নয়নের দিকনির্দেশনা বা তার (বঙ্গবন্ধুর) যে লক্ষ্য ছিল, একেবারে তৃণমূলের মানুষ তাদের আর্থসামাজিক উন্নতি আর সেভাবেই তিনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বলতেন এই ঘুণেধরা সমাজ ভেঙে আমি নতুন সমাজ গড়ে তুলব। বিপ্লবের পরে যে বিবর্তন আসে সেই বিবর্তনের ফলে অনেকেই দেখা যায় হঠাৎ করে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে যায়, আবার অনেকে নিচে পড়ে যায় সেটা যেন না হয় সেই বৈষম্য দূর করা।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান থেকে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
অনুষ্ঠানে মাঠ প্রশাসনের সার্বিক উন্নয়নের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।