সারা দেশে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত বছর আগস্টে কর্মবিরতিতে গিয়েছিলেন দেশের চা শ্রমিকরা। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ১৯ দিনের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়। চা শ্রমিকরা তাঁদের ভূমি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মজুরিসহ বিভিন্ন দাবিতে এই আন্দোলনে নেমেছিলেন। দাবি যৌক্তিক হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও তাঁদের সমর্থন দিয়েছেন।
জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, চা শ্রমিকরা এখনো তাঁদের বকেয়া বেতন পাননি। পুরো বার্ষিক বোনাসও পাননি। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে ‘সাধারণ চা শ্রমিকবৃন্দ’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। পরে শ্রমিকরা ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন। এ ছাড়া বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন চা-বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছে। উল্লেখ্য, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকার দাবি ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলায় ১৭০ টাকা মেনেই তাঁরা কাজে ফিরে যান। সে সময় শিক্ষা, চিকিৎসা, ভূমি অধিকার, মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধিসহ অন্য দাবিগুলোর বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়। প্রায় চার মাস পার হলেও এসব বিষয়ে অগ্রগতি নেই।
খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, মালিকপক্ষের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সর্বশেষ দ্বিবার্ষিক চুক্তি করা হয়েছিল ২০১৯-২০ সালে। এরপর নানা টালবাহানায় ২০২১-২২ সালে নতুন চুক্তি করা হয়নি। গত বছরের আগস্টে চা শ্রমিকরা আন্দোলনে নামলে প্রধানমন্ত্রী ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে দেন। এখন চা শ্রমিকদের দাবি, যেহেতু দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মেয়াদ ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন দৈনিক মজুরি কার্যকর হবে। সে হিসাবে তাঁরা ওই দিন থেকে ৫০ টাকা করে এরিয়ার বিল পান। যুগ যুগ ধরে এ নিয়মেই চলে আসছে।
অভিযোগ রয়েছে, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি সব বাগান কার্যকর করলেও অনেক বাগান অস্থায়ী শ্রমিকদের মজুরি বাড়ায়নি। নানা অজুহাতে অস্থায়ী শ্রমিকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এসব বাগান কর্তৃপক্ষের ভাষ্য হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী স্থায়ী শ্রমিকদের ১৭০ টাকা করে দিচ্ছি। কিন্তু অস্থায়ী শ্রমিকদের জন্য এ রকম কোনো নির্দেশনা আসেনি।
চা শ্রমিকদের বকেয়া যদি ন্যায্য হয়, তাহলে তা পরিশোধ করতেই হবে। কোনো অজুহাতে তাঁদের ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, আমাদের অর্থনীতিতে চা-শিল্প একটি বড় ভূমিকা রাখছে। গত আন্দোলন ও কর্মবিরতির সময় অনেক ক্রেতা এসে ফিরে গেছেন। চা-বাগানকে কেন্দ্র করে নতুন করে কোনো অসন্তোষ দানা বাঁধুক, এটা কাম্য হতে পারে না।