মাছের মেলায় আইন লঙ্ঘন করে বিক্রি হচ্ছে ‘বাঘাইড়’

44

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
আবারও বসেছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মিলনস্থলের মাঠে বসা এই মাছের মেলা শীর্ষক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা প্রায় দেড়শ’ বছরের।
প্রতি বছর পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয় এ মেলার। মেলাটি সনাতন ধর্মালম্বীর পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে হলেও বর্তমানে সার্বজনীন উৎসবে রূপ নেয় ‘মাছের মেলা’ নামে।
তবে আইন অমান্য করে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ তে সংরক্ষিত বিশালাকৃতি বাঘাইড় মাছ। প্রায় ৭৫ কেজি ওজনের এই মাছের দাম হাঁকা হচ্ছে প্রায় তিন লাখ টাকা। তবে ক্রেতারা বাঘাইড় মাছটি ক্রয়ের ক্ষেত্রে দেড় লাখ টাকার ওপর দাম করছেন না।
মেলা সম্পর্কে জানা যায়, মেলাটি প্রথমে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা ও মনু নদীর মিলনস্থল মনুমুখ নামক স্থানে শুরু হলেও সামাজিক দ্বন্দ্বের কারণে বর্তমানে সদরের ২৬ কিলোমিটার উত্তরে শেরপুরেই হয়ে আসছে এই মেলা।
মৌলভীবাজারের হাকালুকি, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড় ও কুশিয়ারা নদীর মাছ বেশি প্রাধান্য পায় মেলায় আসা ক্রেতাদের মধ্যে। এ মেলাকে ঘিরে মাছ ব্যবসায়ীরা ১৫ দিন আগে থেকে মাছ মজুদ রেখে মেলায় আসার প্রস্তুতি নেন।
করোনা ভাইরাস ঝুঁকির কারণে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় গেল দুই বছর এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আবারও বসতে শুরু করেছে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) ভোর থেকেই আড়তদাররা নিয়ে এসেছেন বড় বড় আকারের মাছ। থালায় থালায় সাজিয়ে রেখেছেন বিশাল বড় বড় মাছ। মজুদ করে রাখা হয়েছে ছোট-বড় নানা জাতের মাছ। কালের বিবর্তনে অনেক মাছ বিলুপ্ত হলেও এ মেলায় দেখা যায় প্রায় সব প্রজাতির মাছ। রয়েছে বোয়াল, আইড়, কাতলা, রুই ইত্যাদি। তবে চিতল মাছ চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
মাছ বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, বেশির ভাগ মানুষই মাছ দেখতে আসেন। কিনতে আসেন না। আগ্রহ নিয়ে দামদর করেই চলে যান। ভালো মাছের দামও অনেক।
হাঁড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে মেলাটিতে। মাছ কিনতে সবাই না এলেও মেলায় অনেকেই আসেন মাছ দেখতে। মেলাকে কেন্দ্র করে মাছ ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত করছেন বড় বড় দোকান।
মাছ কিনতে আসা মিলন শীল বলেন, এ মেলায় মাছ কিনার মতো না। দাম খুব চড়া। কেজি দরে মাছ বিক্রি করতে চাচ্ছে না বিক্রেতারা। আস্তা একটা ৪/৫ কেজি ওজনের একটা কাতলা মাছের দাম চাচ্ছেন ৫ হাজার টাকা।
মেলায় মাছ ছাড়াও গৃহস্থালী সামগ্রী, হস্তশিল্প, গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী পণ্য, খেলনা সামগ্রী, নানা জাতের দেশীয় খাবারের দোকান, কাঠের তৈরি ফার্নিচার এবং সব ধরনের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। মেলায় সস্তা দরে জিনিসপত্র কিনতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা এসেছেন।
বাঘাইড় মাছের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাঘাইড় প্রজাতিটি বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। ফলে এ মাছটি বিক্রি করা আইনের চোখে বৈধ নয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাজারগুলোতে বিশেষ দিবস ঘিরে এ মাছটি বিক্রি হয়ে আসছে। যা হুট করে বন্ধ করা সম্ভবপর হবে না। কারণ, ব্যবসায়ীরা এর পেছনে অনেক অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন। তবে, আমরা এ ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা অব্যাহত রেখেছি। বাজারে বাজারে বিলি করছি সচেতনতামূলক লিফলেট এবং পোস্টার। আশা করছি, ভবিষ্যতে এই বাঘাইড় মাছ বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে।