সড়ক দুর্ঘটনা কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। ৯টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও টেলিভিশনে প্রচারিত খবরের ভিত্তিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, দেশে ২০২২ সালে ছয় হাজার ৮২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৭১৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১২ হাজার ৬১৫ জন। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয়েছে মোটরসাইকেলে। দুই হাজার ৯৭৩ দুর্ঘটনায় তিন হাজার ৯১ জন নিহত হয়, যা মোট নিহতের ৪০.০৭ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান বলছে, গত চার বছরের মধ্যে ২০২২ সালে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির মাত্রা সর্বোচ্চ।
সড়ক দুর্ঘটনা কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। বরং প্রতিবছর দুর্ঘটনার হার ও সংখ্যা বাড়ছে। একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ০.৮৯ শতাংশ, প্রাণহানি বেড়েছে ৪.২২ শতাংশ এবং আহত বেড়েছে ৩.৮৮ শতাংশ। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৩.৪৩ শতাংশ, প্রাণহানি বেড়েছে ১৫.৭০ শতাংশ এবং আহত বেড়েছে ১.২০ শতাংশ। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ২৭.১৪ শতাংশ, প্রাণহানি বেড়েছে ২২.৭৪ শতাংশ এবং আহত বেড়েছে ৬৮.৯২ শতাংশ।
গত এক বছরের সড়ক দুর্ঘটনার খবর বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সড়কে দুর্ঘটনায় যানবাহনের সংখ্যার বিচারেও মোটরসাইকেল রয়েছে শীর্ষে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সড়কে দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যানবাহন হিসাব করলে এর মধ্যে গড়ে ২৬ শতাংশের ওপরে ছিল মোটরসাইকেল। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৮৪৮টি সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, এসব দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৩৯.৮২ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। জুন মাসে দেশে ৪৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে ৮২১ জন। এর মধ্যে ১৯৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই হিসাবে মোট দুর্ঘটনার ৪২.১৮ শতাংশ মোটরসাইকেলের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়া ও বর্তমানে তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠার পেছনে আছে নীতিগত দুর্বলতা। সরকার এখন মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পন্থার কথা বললেও এটি সহজে সম্ভব নয়।
সরকার মোটরসাইকেলকে সহজলভ্য করেছে। কিন্তু মোটরসাইকেল চলার উপযুক্ত সড়ক করেনি, আলাদা লেন করেনি। মোটরসাইকেল এখন যাতায়াতব্যবস্থার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হয়েছে ও জীবিকার পথ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দক্ষ চালক ও মোটরসাইকেলের চলাচল উপযোগী সড়ক আগে করতে হবে।
আমরা কোনোমতেই এমন অনিরাপদ সড়ক চাই না। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সড়কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। অনিয়ম কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
দুর্ঘটনা নামের হত্যাকা- রোধে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবেÑএটাই আমাদের প্রত্যাশা।