কাজিরবাজার ডেস্ক :
শরিকদের হাত কোনোভাবেই ছাড়ছে না আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের জোটসঙ্গীদের ২৭ দফা মোকাবিলায় দীর্ঘদিনের পুরোনো ও আদর্শিক মিত্রদের নিয়েই নির্বাচনি লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করবে তারা।
এর অংশ হিসাবে বিএনপিদলীয় সংসদ-সদস্যদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে জোট শরিকদের দুটি আসন ছেড়ে দিয়ে নতুন করে সেই বার্তাটাই দিলেন ক্ষমতাসীনরা।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসাবে বিএনপির সাতজন সংসদ-সদস্য ১০ ডিসেম্বর পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরে তারা জাতীয় সংসদে গিয়ে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। ১ ফেব্রুয়ারি ছয়টি আসনে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে ১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় বোর্ডের সভায় উপনির্বাচনের আসনগুলোয় দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। ওই বৈঠকে ১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদকে দুটি আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় আওয়ামী লীগ। এর বাইরে তিনটি আসনে তারা দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে। আরেকটি আসনে কোনো প্রার্থী না দিয়ে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ১৪ দলীয় জোটের শরিক দুই প্রধান দলকে উপনির্বাচনে দুটি আসন ছেড়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে অগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের মানুষকে একটি বার্তা দিতে চায় আওয়ামী লীগ। আর এই বার্তাটি হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদল ও জোটকে মোকাবিলায় অতীতের মতো আগামী দিনেও দীর্ঘদিনের পুরোনো এবং আদর্শিক মিত্রদের নিয়ে একসঙ্গে পথ চলবে তারা। অতীতের তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আগামী দিনেও ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটের মাঠে থাকবে ১৪ দলীয় জোট। এ কারণে মান-অভিমানসহ দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের অচলায়তন ভেঙে শরিকদের পুরোমাত্রায় সক্রিয় করতেই তাদের নামানো হয়েছে ভোটের লড়াইয়ে।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু এমপি বুধবার বলেন, যে দুটি আসনে শরিকদের ছাড় দেওয়া হয়েছে এর আগেও তাদের ওই আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, ১৪ দলীয় জোট একটি আদর্শিক জোট। গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে এবং সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় এই জোট দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করছে। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ আরও বলেন, রাজপথে ও নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট একসঙ্গে ছিল, আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী হলেন অধ্যাপক ইয়াসিন আলী। তিনি এর আগে এই আসনে ২০১৪ সালে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে সংসদ-সদস্য হয়েছিলেন। এর বাইরে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া বগুড়া-৪ আসনটিতে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি ১৪ দলীয় জোটের হয়ে সংসদ-সদস্য ছিলেন।
এ দুই আসনের বাইরে বগুড়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে দলটির নেতা রাগেবুল আহসানকে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ নিজস্ব প্রার্থী দিয়েছে। তারা হলেন মু. জিয়াউর রহমান এবং মো. আবদুল ওদুদ। এ দুজনই ২০১৮ সালের নির্বাচনে নিজ নিজ আসনে ভোট করে বিএনপির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
এর বাইরে ব্রহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী দেয়নি। জোটের কোনো শরিককেও এই আসন ছাড়েনি দলটি। এই আসন থেকে ২০১৮ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির উকিল আবদুস সাত্তার ভুইয়া। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মঈনউদ্দিন মঈন। ওই নির্বাচনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছিল আওয়ামী লীগ। ২০০৮ ও ২০১৪ সালেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দুবারই সংসদ-সদস্য হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা।
উনির্বাচনে আসন ছাড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন এমপি বুধবার বলেন, অতীতের তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট একসঙ্গে করেছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখেও একই লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে ১৪ দল। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই উপনির্বাচনে শরিক দলগুলোর মধ্যে আসন ভাগাভাগি একটি ‘ড্রেস রিহার্সেল’ বলা যেতে পারে। এতে শরিক দলগুলোর মধ্যে একে অপরের প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাসের জায়গাটার আরও উন্নতি ঘটবে।
আরেক শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি এ প্রসঙ্গে বলেন, রাজনীতিতে মান-অভিমানের কোনো জায়গা নেই। যে আদর্শিক কারণে ১৪ দলীয় জোট একসময় গঠিত হয়েছিল, তার প্রয়োজনীয়তা এবং আবশ্যিকতা এখনো শতভাগ বিদ্যমান। তিনি আরও বলেন, ঘটনাচক্রে ছয়টি আসন শূন্য হয়েছে। আমরা মনে করেছি, এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ১৪ দলীয় জোটকে আরও দৃশ্যমান করতে। সাবেক এই তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক রাজনীতি মোকাবিলায় ১৪ দলীয় জোট রাজনীতির মাঠে যে প্রস্তুত, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে উপনির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর কাছে এটি আরও পরিষ্কার হবে।