দ্রুত পৌঁছে যাক বই

9

গত রবিবার সারা দেশে একযোগে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বই বিতরণের মাধ্যমে পালিত হয়েছে বই উৎসব। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব বই না পৌঁছালেও উৎসবে কমতি ছিল না। শিশুরা নাচ-গান, আবৃত্তি আর উল্লাসে উৎসব রঙিন করে তোলে। সারা দেশে এবার চার কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১ জন শিক্ষার্থীকে ৩৩ কোটি ৯১ লাখ ১২ হাজার ৩০০ কপি পাঠ্য বই বিনা মূল্যে বিতরণ করবে সরকার।
২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার মোট ৪৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ২১১ কপি বই বিনা মূল্যে বিতরণ করেছে। পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের হাতে নিজ নিজ মাতৃভাষার বই তুলে দেওয়া হয়।
বই উৎসবকে কেন্দ্র করে বছরের প্রথম দিনে শিশুরা মেতেছিল এক অন্য রকম উৎসবে। নতুন বইয়ের গন্ধে তারা মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল। বছরের প্রথম দিনে স্কুলগামী শিশুদের জন্য এর চেয়ে বড় উপহার, বড় আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে! প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিশু-কিশোরই শরিক ছিল এই উৎসবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধান সাফল্যগুলোর একটি হচ্ছে সময়মতো শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া।
শৈশবের শিক্ষাই পরবর্তী শিক্ষাজীবনের ভিত হিসেবে কাজ করে। ভিত দুর্বল হলে তার ওপর যেমন শক্ত ইমারত তৈরি হয় না, তেমনি শৈশবের শিক্ষা দুর্বল হলে পরবর্তী শিক্ষাজীবন ভালো হয় না। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি বছরের শুরুর দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার উদ্যোগটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় একটি কাজ। শৈশবে নতুন বই হাতে পাওয়ার আনন্দ-অভিজ্ঞতা আমাদের সবারই আছে। কিন্তু সে বই হাতে আসতে আগে অনেক সময় লেগে যেত। কখনো স্কুলে ক্লাস শুরু হয়ে যেত। অপেক্ষার সেই সময়গুলো কতটা অস্বস্তিতে কাটাতে হতো, তা-ও আমাদের অজানা নয়। আজকের শিক্ষার্থীরা সেদিক থেকে সৌভাগ্যবান। শৈশবে শিক্ষার শক্ত ভিত তৈরির জন্য শুধু নতুন বই নয়, আরো অনেক কিছুই করছে সরকার। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
শিশু শিক্ষা যত বেশি আনন্দময় হবে, তত বেশি সাফল্য ধরা দেবেÑসারা দুনিয়ায় এটাই স্বীকৃত। কিন্তু আমাদের শিশুরা যেন সেই শিক্ষা থেকে অনেকটা দূরেই রয়ে গেছে। অনেক স্কুলেই মাঠ নেই, যেগুলোতে মাঠ আছে সেগুলোতেও খেলার উপকরণ নেই, নয়তো সুযোগ থাকে না। বইয়ের বোঝা, কোচিংয়ের শৃঙ্খল শিশুদের মনের আনন্দ অনেকটাই কেড়ে নিচ্ছে। শৈশবেই শিক্ষা হয়ে ওঠে ভীতিকর এক প্রস্তুতি। এ থেকে শিশুদের মুক্ত করতে হবে। তাদের জন্য আনন্দময় শৈশব নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে বই উৎসব করা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সেই সঙ্গে আমরা আশা করব, সামগ্রিকভাবে শিশু শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার আরো আন্তরিক হবে। বেশ কিছু বই এখনো বিতরণ করা যায়নি। ছাপাখানা থেকে এসে পৌঁছায়নি। আমরা আশা করব, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে চলে যাবে।