কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন বছরের শুরুতেই উৎসবের মধ্য দিয়ে শিশুদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। গত কয়েক বছর ধরে সারা দেশেই এ উৎসব পালিত হয়।
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া- সবগুলো জেলা-উপজেলায় নতুন বছরে শিশুরা নতুন বই নিয়ে স্কুলে যাবে- এটাই সরকারের মূল লক্ষ্য। তবে এবার এর ব্যত্যয় ঘটতে পারে খাগড়াছড়িতে। কারণ, জেলায় এবার চাহিদার তুলনায় বই এসেছে মাত্র ৩৮ শতাংশ।
চাহিদানুযায়ী না আসায় সব শিশুর হাতে বই তুলে দেওয়া যাচ্ছে না, অনেকটাই নিশ্চিত। কিন্তু শিক্ষা বিভাগ বলেছে, শতভাগ বই দিতে না পারলেও কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।
খাগড়াছড়িতে প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই আসেনি। আসেনি ইংলিশ মিডিয়ামের কোনো বই। শুধুমাত্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বই পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।
শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৫৯৩টি সরকারিসহ মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৭৯। তার অনুক‚লে ২০২৩ সালে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বইয়ের চাহিদা ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৬৯২। কিন্তু বই এসেছে মাত্র ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬৫৯। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই পৌঁছেনি। শুধু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বই এসেছে জেলায়।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের স্টোর কিপার মো. নুরুল ইসলাম লালু জানান, প্রাক-প্রাথমিকে বইয়ের সম্ভাব্য চাহিদার ২১ হাজার ৭৫৩ (শতভাগ) এসেছে জেলায়। প্রথম শ্রেণিতে ৫৮ হাজার ২৬০ এবং দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য ৫৪ হাজার ৬৭৫ বই দরকার, কিন্তু কোনোটিই আসেনি। তা ছাড়া জেলার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলেও চাহিদানুযায়ী কোনো বই আসেনি।
জানা গেছে, জেলার তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ১ লাখ ৮ হাজার ৭৯২ বই প্রয়োজন। কিন্তু বই পৌঁছেছে ৬২ হাজার ৭১২টি। চতুর্থ শ্রেণির জন্য প্রয়োজন ১ লাখ ১১ হাজার ৩১২ বই। কিন্তু বই এসেছে ৪৬ হাজার ৫৪৩টি। পঞ্চম শ্রেণির ১ লাখ ২ হাজার ৯০০ বইয়ের বিপরীতে এসেছে ৪৬ হাজার ৫৪৩টি। অভিভাবকরা বলছেন, সময়মতো বই না পেলে সন্তানদের পড়াশোনা ব্যাহত হবে। স্কুলে এবং ঘরে তাদের পাঠদান সমস্যার সম্মুখীন হবে।
খাগড়াছড়ির রঞ্জন মনি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধনা চন্দ্র সেন বলেন, আমরা ৩০ শতাংশের মতো বই পেয়েছি। শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) হয়ত আরও কিছু বই আসতে পারে।
তখন আমরা বুঝতে পারব কতটা বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারব। প্রথমদিন হয়তো সবাইকে দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সবার হাতে বই তুলে দিতে পারবো।
পানখাইয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুনুপ্রু মারমা বলেন, শ্রেণিগত বই পাওয়া যায়নি, গবে আমরা মাতৃভাষার বইগুলো পেয়েছি। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির বই পাওয়া গেছে। আমাদের হাতে যা আছে, তাই সব শিক্ষার্থীর হাতে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, আমরা আশা করি, কোনো শিক্ষার্থী বই ছাড়া ফিরবে না। অন্তত দুটি-তিনটি করে বই আমরা দেওয়ার চেষ্টা করব। স্কুলগুলোয় আমরা এমনভাবে বই দিচ্ছি যাতে কেউ শূন্য না থাকে। চাহিদার অর্ধেক হলেও বই পাবে। বৈশ্বিক সমস্যার কারণে এবার হয়ত বিলম্ব হচ্ছে। তবে সরকার সব শিশুর হাতে বই পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। সে হিসেবে কাজ চলছে।