কাজিরবাজার ডেস্ক :
মেট্রোরেল যুগে প্রবেশের সঙ্গে বাংলাদেশ চারটি মাইলফলক ছুঁয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেল বাংলাদেশের জনগণের মাথার মুকুটে অহংকারের নতুন পালক।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টর খেলার মাঠে দেশের প্রথম মেট্রোরেল-এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতি সারা বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। আজকে আমরা বাংলাদেশের জনগণের মাথার মুকুটে নতুন অহংকারের পালক সংযোজিত করলাম। এমআরটি লাইন-৬ এর বাকি অংশ খুব তাড়াতাড়ি উদ্বোধন করবো ইনশাল্লাহ।
বাংলাদেশ চারটি মাইলফলক স্পর্শ করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রোরেল উদ্বোধনের সঙ্গে প্রযুক্তিগত দিক থেকে অন্তত চারটি মাইলফলক বাংলাদেশের জনগণকে স্পর্শ করলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১. মেট্রোরেল নিজেই একটি মাইল ফলক। ২. এ প্রথম বাংলাদেশ বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করলো। ৩. মেট্রোরেল দূর নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। রিমোর্ট কন্ট্রোল দ্বারা, ডিজিটাল পদ্ধতিতে এটা পরিচালিত হবে। তার ফলে আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছি এটা তারই একটা অংশ হিসেবে কাজ করবে। নতুন মাত্রা সংযোজিত হলো। ৪. বাংলাদেশ দ্রæত গতির ট্রেনের যুগে পদার্পণ করলো। এ মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার।
মেট্রোরেল ব্যবহারে সবাইকে যতœবান হওয়ার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক টাকা খরচ করে মেট্রোরেল করা হয়েছে। এটা সংরক্ষণ করা, এর মান নিশ্চিত করা, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, এর সব কিছু কিন্তু যারা ব্যবহার করবে তাদের দায়িত্ব।
হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজে সম্পৃক্ত সাত জাপানি নাগরিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। তাদের নামে মেট্রোর স্টেশনে নাম ফলক থাকবে জানান তিনি।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী এমআরটি-৬ লাইনের নির্মাণের সময় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এতদিন কষ্ট সহ্য করার জন্য ঢাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
মেট্রোরেলের সবগুলো রুট চালু হলে ঢাকাবাসীকে আর যানজটে কষ্ট পেতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেল পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে আমি মনে করি আমাদের দেশের মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়বে। আমাদের জিডিপিতেও যথেষ্ট অবদান রাখবে। যারা ঢাকায় আসবেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে নেমে উত্তরা পর্যন্ত যেতে হলে কিন্তু আর যানজটে পড়তে হবে না। এভাবে যানজট নিরসন হবে।’
তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এমআরটি নেটওয়ার্ক (মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক) পুরো বাস্তবায়িত হলে, এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যাতায়াতে যে সময়টা নষ্ট হয়, টাকা পয়সা খরচ হয়। সেগুলো আর হবে না। খুব দ্রæত সময়ে নির্বিগ্নে সবাই চলাচল করতে পারবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম ঢাকা যানজট মুক্ত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেবো এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবো। আমরা মেট্রোরেল রুটের মাধ্যমে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছি। যা ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আমি আশা করি। ৪টি মেট্রোরেল নির্মাণ কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন। ২টি মেট্রোরেলের সমীক্ষা চলছে।
সবগুলো রুট চালু হলে দিনে প্রায় ৫০ লাখ ৪০ হাজার যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবে বলে জানান সরকার প্রধান।
ঢাকা ছাড়াও অন্য বড় শহরেও এ ধরনের প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করব, আমাদের দেশবাসী তারাও (মেট্রোরেলের সেবা গ্রহণের) সুযোগ পাবেন।
মেট্রোরেল পরিবেশবান্ধব উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, এটা ইলেকট্রিক ট্রেন। এতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। পাতাল মেট্রোরেলের টানেলসংলগ্ন মাটির শব্দ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে। ফলে মেট্রোরেলে শব্দ ও কম্পন দূষণ মাত্রার মানদÐ সীমার অনেক নিচে থাকবে।’
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে দেশসেবার সুযোগ দেওয়ায় এগুলো করা গেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের যে উন্নতি হয়, সেটা আজ প্রমাণিত সত্য।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করে শেখ হাসিনা বলেন, অসম সাহসে আমরা অসীম সম্ভাবনার পথে/ ছুটিয়া চলেছি, সময় কোথায়/ পিছে চাব কোন মতে!
তিনি বলেন, এগিয়ে যাবে বাঙালির দুর্বার গতিতে। গড়ে তুলব সব বাধা অতিক্রম করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
বেলা ১১টায় সুধী সমাবেশের শুরুতে দেশের প্রথম মেট্রোরেল- এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রীর হাতে মেট্রোরেলের একটি রেপ্লিকা মডেল তুলে দেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেল উপলক্ষে একটি স্মারক ডাক টিকেট এবং একটি ৫০টাকার স্মারক নোট অবমুক্ত করেন।
পরে মেট্রোরেল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটোসেশন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সুধী সমাবেশে অংশগ্রহণে শেষে প্রধানমন্ত্রী প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকেট কেটে মেট্রোরেলের দিয়াবাড়ি স্টেশনে প্রবেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও আসেন। যাত্রী নিয়ে এটিই মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রেনে যাত্রী হিসেবে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা, জাতীয় সংসদের স্পিকারসহ মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, আমন্ত্রিত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।