দেশে গত কয়েক বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা অতীতের যেকোনো সময়ের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণে সরকার সর্বাত্মক সহায়তা দিয়েছে। আগে যে রাস্তায় বর্ষাকালে হেঁটে যাওয়া যেত না, সেই রাস্তায় এখন যান্ত্রিক বাহন চলে। শুধু তা-ই নয়, গ্রামীণ রাস্তাঘাটের উন্নয়নের প্রভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।
খুব সহজে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে সেখানে। আবার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গে শহর, এমনকি রাজধানীর যোগাযোগও সহজ হয়েছে। পণ্য পরিবহন সহজ হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যেও গতি এসেছে।
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার উদারহস্ত হলেও সব অবকাঠামো সেভাবে কোনো কাজে আসছে কি নাÑএমন প্রশ্নও মাঝেমধ্যে সামনে এসে পড়ে। সরকার আন্তরিক হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে অনেক সময় অনেক অবকাঠামো কোনো কাজে লাগে না। অনেক অবকাঠামো অবহেলায় নষ্ট হয়। যাদের জন্য এসব অবকাঠামো নির্মাণ, তাদের কোনো কাজে না এলে নির্মাণের অর্থ কী? কালের কণ্ঠে গত কয়েক দিনে এমন কিছু খবর এসেছে। যেমনÑগতকাল প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, নেত্রকোনার মদন-ফতেপুর ছয় কিলোমিটার সড়কে সেতু আছে ১১টি। কিন্তু সেতুগুলোতে নেই সংযোগ সড়ক। চারটি সেতুতে তিন-চার বছর ধরে সেতু পারাপারে স্থানীয় লোকজনের ভরসা বাঁশের সাঁকো। সাঁকোগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ। এক যুগের বেশি সময় ধরে এই ১১টি সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে পারে না। স্থানীয় কৃষকরা তিন-চারটি হাওরের হাজারো মেট্রিক টন ধান ঘরে তুলতে ব্যবহার করছেন মদন-ফতেপুর সড়ক। কিন্তু সেতুতে সংযোগ সড়ক না থাকায় ক্ষেতে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মেশিন নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যানবাহনে করে ধান নিয়ে ঘরে ফেরা যাচ্ছে না। মাথায় করে ধান নিয়ে ফেরা কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। সেতু থাকা সত্তে¡ও হালচাষ করতে গরু বা মেশিন ক্ষেতে নিয়ে যেতে নদীতে নৌকা ব্যবহার করতে হয়। দুর্ভোগ পোহানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে কৃষকদের।
গত শনিবার প্রকাশিত আরেক খবরে বলা হয়েছে, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার সুটিয়াকাঠি ইউনিয়নের তারাবুনিয়া খালের ওপর প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে এক বছর আগে ৪৬ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করা হলেও জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সেতুর দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মিত হয়নি। ফলে সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল না করতে পারায় কোনো কাজেই আসছে না সেতুটি।
ওদিকে মাত্র একটি সেতুর অভাবে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মহাকালী ইউনিয়নের ছয়টি এলাকা শহর থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য এসব এলাকার বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসা এখন ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো। এলাকার ৩০ হাজার পরিবারের মানুষ একটি সেতুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহালেও নজর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
যেখানে সেতু আছে, সেখানে সংযোগ সড়ক হবে; যেখানে সেতু প্রয়োজন, সেখানে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবেÑএটাই আমাদের প্রত্যাশা।