কৃষি জমিতে কারখানা করলে কোনো সুবিধা নয় – প্রধানমন্ত্রী

10
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রান্তে যুক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকারের নির্ধারিত একশটি শিল্পাঞ্চলের বাইরে কেউ কৃষি জমি নষ্ট করে শিল্প প্রতিষ্ঠান করলে তারা কোনো সুবিধা পাবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি পাটকে রফতানিযোগ্য আয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য করার দিকে নজর দিতে বলেছেন তিনি।
সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
কৃষিতে সরকারের গুরুত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব এবং সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। ধ্বংসস্ত‚পের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন শূন্য হাতে। তিনি শুধু কৃষিবিদদের সম্মানই বাড়াননি, গবেষণা এবং যাতে খাদ্য উৎপাদন বাড়ে, তারও ব্যবস্থা করেছিলেন। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের ঘোষণাও তিনি দিয়েছিলেন। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষিতে উৎপাদন বাড়বে এবং তিন গুণ উৎপাদন যাতে বেশি হয়, সেটাই তার লক্ষ্য ছিল এবং সেই লক্ষ্যেই তিনি কাজ করে যাচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতার সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর যখন সরকার গঠনের সুযোগ পায়, তখন আমরা গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিই। যে দেশের অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল, সেখানে আরও বেশি দক্ষ জনশক্তি, গবেষণা এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করা দরকার- সেই লক্ষ্য থেকেই আমরা পদক্ষেপ নেই। আমাদের দেশ খাদ্যঘাটতির দেশ। ৯৬ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করেছিলাম, তখন পেয়েছিলাম ৪০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি। সেই বাংলাদেশকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে। আমাদের কৃষিবিদ এবং কৃষকদের যত ধরনের সহযোগিতা দরকার, আমরা করেছিলাম। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা এই অর্জনটা আনতে পেরেছি। আমাদের কৃষির সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, তাদের নানা ধরনের প্রণোদনা আমরা দিয়ে যাচ্ছি, সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছি। আমাদের জনসংখ্যা বেশি, জনসংখ্যা বাড়ছে, তবে খাদ্য নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। কারো কাছে হাত পেতে যেন আমাদের চলতে না হয় সেদিকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। শুধু উৎপাদন করলেই হবে না, প্রক্রিয়াজাত করার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। প্রক্রিয়াজাত করে আমরা যেন আরও বেশি ফলন ফলিয়ে বিদেশে রফতানি করতে পারি, সেই চিন্তাও আমাদের করতে হবে। সেদিকেও আমরা বিশেষভাবে নজর দিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা এ জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। আবার শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেই হবে না, দেশের মানুষের পুষ্টিটাও নিশ্চিত করতে হবে। আর এই পুষ্টি নিশ্চিত করতে গেলে নিরাপদ পুষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে।
গবেষণা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ধান কতদিন পর্যন্ত পানির নিচে থাকলে পচে না, সেই গবেষণাও আমরা করে যাচ্ছি। লবণাক্ত-সহিষ্ণু ধান ইতোমধ্যে সফলতা অর্জন করেছে, খরা সহিষ্ণু ধান অগ্রগামী এবং জলমগ্নতা এখন সেভাবে হয়নি। তবে আমি মনে করি, গবেষণা করলে আবাদ করতে পারব। আজ মানুষ পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন। পরিবেশবান্ধব সব থেকে উন্নত মানের কৃষিপণ্য হচ্ছে পাট। এই পাট থেকে আমরা নানা ধরনের পাটজাত পণ্য উৎপাদন করা যায়। তাই পাটের ওপরও আমরা গবেষণা করে যাচ্ছি এবং জিনোম সিকোয়েন্স বের করতে পেরেছি। জন্মরহস্য বের করার পর এখন এই পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি, বহুমুখী ব্যবহার এটা কিন্তু আমরা করতে পারি। সেটা পরিবেশবান্ধব এবং পাট হতে পারে আমাদের রফতানিযোগ্য আয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। এর ওপর আমাদের আরও বেশি নজর দেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, আমাদের আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে যে ভৌগোলিক দিক থেকে দেশের সীমারেখা ছোট হলেও আমাদের জনসংখ্যা বেশি। এই জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপদ করতে হলে আমাদের কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা সারা দেশে একশটি শিল্পাঞ্চল করে দিচ্ছি। যারা শিল্পায়ন করতে চায়, তারা শুধু এসব অঞ্চলেই শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে পারবে। কোনো ধরনের কৃষি জমি বিশেষ করে আমাদের তিন ফসলি জমি কেউ নষ্ট করতে পারবে না। সেখানে কোনো শিল্প বা কিছু করলে কোনো সুবিধাই তারা পাবেন না। আমরা কিন্তু সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এর আগে যারা ক্ষমতায় ছিল, এ ধরনের কোনো চিন্তা করেনি বলেই আমরা অনেক ভালো, উন্নতমানের জমি হারিয়েছি। আমরা আর ভবিষ্যতে হারাতে চাই না, এ বিষয়ে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি।
দানাদার ফসল উৎপাদনে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন ৯৬ সালে সরকার গঠন করি তখন বোধ হয় সর্বসাকুল্যে ধান, গমসহ দানাদার শস্য মাত্র এক কোটি ৬৯ লাখ টনের মতো উৎপাদন হতো। আজ সেখানে আমরা চার কোটি ৩২ লাখ টনের মতো উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছি। এটি কিন্তু গবেষণার ফসল, গবেষণা করেই কিন্তু আমরা এটি করতে পেরেছি। এই সাফল্য আমরা দেখাতে পেরেছি বলেই আমাদের খাদ্যে কখনো ঘাটতি হয়নি। এই চলতি বছরে আমরা হিসাব নিচ্ছি, হিসাব যদিও এখনো পাওয়া যায়নি, তারপরও আমরা এখন চার কোটি চার লাখ টন চালসহ প্রায় চার কোটি ৭২ লাখ টন দানাদার শস্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা কৃষি উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছি। আর বর্তমানে তা আরও দরকার এই কারণে যে, করোনাভাইরাসের পর বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জন্য নিষেধাজ্ঞা, ফলে খাদ্য পণ্যের দাম সারা বিশ্বেই বেড়েছে। এত বেড়েছে বিদেশে সেটা সবা ক্রয ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। সেই অবস্থায় আমাদের দেশ যাতে কোনো বিপদে না পড়ে, সে জন্য উৎপাদন বাড়ানো এবং তা সংরক্ষণ করা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারোমাসি কাঁঠালের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজকে উন্নত বিশ্বে অনেকেই মাংস খেতে চায় না। মাংসের পরিবর্তে কাঁঠাল পছন্দ করে। এই কাঁচা কাঁঠালের কাবাব হয়, বার্গার হয় নানাভাবে, বিদেশে এখন ব্যবহার করছে, খাচ্ছে। তার দাম কিন্তু অনেক বেশি। কাঁচা কাঁঠালে বার্গার, মাংস দিয়ে যে বার্গার, রোল তৈরি হয় সেগুলোর থেকে দাম অনেক বেশি। এর ব্যাপক চাহিদা আছে। আমরা যদি বারোমাসি কাঁঠাল উৎপাদন করতে পারি মাংসের পরিবর্তে এই কাঁঠালই এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে এখন মাছ খায়, কিন্তু মাংস খায় না। তাদের জন্য বিকল্প কাঁঠাল। ১২ মাসই যদি কাঁঠাল জন্মায়, তবে বারোমাসই ব্যবহার করা যাবে। এটা অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। কাঁঠাল এমন একটা জিনিস যার কিছুই ফেলা যায় না। যেটাকে আমাদের জাতীয় ফল হিসেবে জাতির পিতা দিয়ে গেছেন, এর কিন্তু কিছু ফেলা যায় না। কীভাবে এর উৎপাদন আরও বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে আপনারা উদ্যোগ নেবেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ।