কাজিরবাজার ডেস্ক :
পদত্যাগ করা বিএনপির সংসদ সদস্যদের আসন ‘শূন্য’ ঘোষণা করে গেজেট হাতে পেলেই নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ‘যেদিন পদত্যাগের গেজেট নোটিফিকেশন হবে, তার পরের ৯০ দিনের মধ্যে ওই সব আসনে উপনির্বাচন হবে।’
এর আগে রবিবার বিএনপি দলীয় সাত জন সংসদ সদস্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাদের মধ্যে সশরীরে উপস্থিত হয়ে জমা দেওয়া ৫ জনের পদত্যাগপত্র ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। বাকি দুই জনের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে তিনি সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্পিকার।
বিএনপি’র পদত্যাগে শূন্য হওয়া সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন প্রশ্নে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ রবিবার বলেন, ‘পদত্যাগ জনিত কারণে হোক আর যে কোনও কারণেই হোক জাতীয় সংসদের কোনও আসন শূন্য হলে সেখানে উপনির্বাচন হবে।’
বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে আসন শূন্য ঘোষণা হলে উপনির্বাচন প্রয়োজন পড়বে কী না জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের আগে কোনও সংসদীয় আসন শূন্য হলে উপনির্বাচন করতে হবে। চলতি একাদশ সংসদের মেয়াদ এখনও এক বছরের বেশি রয়েছে। কাজেই এখন কোনও আসন শূন্য হলে নির্বাচন কমিশনকে আইন অনুযায়ী উপ নির্বাচন করতেই হবে।’
এ বিষয়ে কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গণমাধ্যমে বিএনপি’র এমপিদের পদক্ষেপের কথা জেনেছি। এ বিষয়ে কোনও গেজেট নোটিফিকেশন আমরা পাইনি। গেজেট পেলে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। যেদিন পদত্যাগের গেজেট নোটিফিকেশন হবে তার ৯০ দিনের মধ্যে সেই সব আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, ‘সংসদ সচিবালয়ের গেজেট নোটিফিকেশন হওয়ার পরেই আমাদের কাজ শুরু হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত পদত্যাগের নির্দেশ গেজেট নোটিফিকেশন হবে না, ততদিন পর্যন্ত ইসির কোনও করণীয় নেই।’
বিএনপির এমপিদের পদত্যাগের বিষয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির সাত জন সংসদ সদস্যের পদত্যাগপত্র তিনি পেয়েছেন। এরমধ্যে পাঁচ জন নিজেরাই এসেছিলেন। বাকী দুজনের একজন অসুস্থ, আরেকজন বিদেশে।
সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা উল্লেখ তরে স্পিকার বলেন, পদত্যাগপত্র সশরীরে এসে জমা দিতে হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। যে পাঁচ জন পদত্যাগপত্র নিয়ে এসেছেন তাদের আসন শূন্য হয়ে গেছে। বাকী দুটি আবেদনের সই যাচাই করা হবে এবং তারাই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন কি না, সংসদ সচিবালয় তা খোঁজ নেবে। তবে হারুনর রশীদ পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন ই-মেইলে, তার সই স্ক্যান করে বসানো হয়েছে। এটা গ্রহণ করা হবে না, তাকে আবার পদত্যাগপত্র দিতে হবে।
তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। সংবিধানের বিধান অনুসারে কোনও সংসদ সদস্যের নিজ স্বাক্ষরযুক্ত পদত্যাগপত্র স্পিকার পেলেই ওই আসন শূন্য হবে।
এ বিষয়ে সংবিধানের ৬৭(২) বলা হয়েছে ‘কোন সংসদ-সদস্য স্পিকারের নিকট স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন, এবং স্পিকার কিংবা স্পিকারের পদ শূন্য থাকিলে বা অন্য কোন কারণে স্পীকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ডেপুটি স্পীকার- যখন উক্ত পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হইতে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হইবে।’
জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতেও সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। কার্যপ্রণালী বিধির ১৭৭ (১) বিধিতে বলা হয়েছে- সংসদের আসন হইতে পদত্যাগ করিতে ইচ্ছুক কোনও সদস্য এই মর্মে স্পীকারকে সম্বোধন করিয়া স্বহস্তে লিখিতভাবে জ্ঞাপন করিবেন যে, তিনি তাঁহার আসন হইতে পদত্যাগ করিতে ইচ্ছুক, এবং তিনি পদত্যাগের জন্য কোনও কারণ দর্শাইবেন না; তবে শর্ত থাকে যে, কোন সদস্য যদি কোন কারণ জ্ঞাপন করেন, অথবা অপ্রাসঙ্গিক কোন বিষয়ের অবতারণা করেন, তাহা হইলে স্পীকার স্বীয় বিবেচনামতে অনুরূপ শব্দ বা বাক্যাংশকে বাদ দিতে পারিবেন এবং উহা সংসদে পাঠ করিয়া শুনানো হইবে না।
সংবিধানের ১৭৮ (৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনও সদস্যের আসন শূন্য হলে সংসদ সচিবালয়ের সচিব তার গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবেন। যাতে ইসি শূন্য পদটি পূরণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।