হতাশার হারে ম্লান সিরিজ জয়ের উৎসব

5

স্পোর্টস ডেস্ক :
চট্টগ্রামে টিকিটের চাহিদা হয়ে গিয়েছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু গ্যালারি ভর্তি দর্শককে ফিরতে হয়েছে হতাশা সঙ্গী করে। সিরিজ জয়ের উৎসব কাটা পড়েছে লড়াইহীন এক হারে।
যদিও দর্শক সাক্ষী হয়েছেন ইতিহাসের। ঈষাণ কিষাণ নিজের প্রথম সেঞ্চুরিকে বানিয়েছেন ডাবল। সেঞ্চুরি পেয়েছেন ভিরাট কোহলিও। তাদের জুটি রেকর্ড গড়েছে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে চারশ ছাড়ানো সংগ্রহ পেয়েছে কোনো দল।
শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে ২২৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে রানের ব্যবধানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এটি। এর আগে ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩৩ রানে হারে বাংলাদেশ।
শেষ ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ৪০৯ রান করে ভারত। জবাব দিতে নেমে ১৮২ রান করে অলআউট হয়ে যায় টাইগাররা। এই হারের পরও সিরিজ থাকছে বাংলাদেশের। ঢাকায় সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে জয় পেয়েছিল লিটন দাসের দল।
আগের দুই ম্যাচ হেরেই সিরিজ খুঁইয়ে ফেলা ভারতের তৃতীয় ওয়ানডেতে হারানোর তেমন কিছু ছিল না। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ধাক্কাও খেয়েছিল তারা। পঞ্চম ওভারেই শেখর ধাওয়ানকে আউট করেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
প্রথম বলে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা মিরাজের বলে ডিফেন্ড করতে চেয়েছিলেন শেখর ধাওয়ান। কিন্তু বল তার প্যাডে লাগে। শুরুতে অবশ্য আম্পায়ারের কাছে মনে হয়েছিল ব্যাটে লেগেছে বল, তিনি দেন নট আউট। পরে রিভিউ নিয়ে সফল হয়েছে বাংলাদেশ।
উইকেট নেওয়ার স্বস্তির কিছুক্ষণ পরই সঙ্গী হয় হতাশাও। শর্ট মিডউইকেট ভিরাট কোহলির সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন লিটন। পরের বলেই বাউন্ডারি হাঁকান কোহলি। এরপর রান তোলার গতি ঠিক রেখে দুর্দান্ত সব শট খেলতে থাকেন ঈষাণ কিষাণ। তাকে যোগ্যভাবেই সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন কোহলি।
৬৮তম বলে এসে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পান ঈষাণ। এরপরও খেলছিলেন ভালোভাবেই। ৮৪ রানে এসে তার একটি ক্যাচ ধরার দারুণ প্রচেষ্টা ছিল সাকিব আল হাসানের। ডিপ মিডউইকেট থেকে দৌড়ে লং অনের দিকে অনেকটা দৌড়ে আসেন তিনি। কিন্তু বল হাতে রাখতে পারেননি সাকিব। শেষ অবধি ৮৫তম বলে এসে সেঞ্চুরি পেয়ে যান কিষাণ। ১৩ চারের সঙ্গে দুটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি।
নিজের প্রথম সেঞ্চুরিকে এরপর কিষাণ নিয়ে যেতে থাকেন ডাবল সেঞ্চুরির দিকে। সম্ভাব্য প্রায় সবই করেছেন এই ব্যাটার, গড়েছেন অনেক রেকর্ডও। ১২৬ বলে পাওয়া তার ডাবল সেঞ্চুরি ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম। ক্রিস গেইলের ১৩৮ বলকে ছাড়িয়ে গেছেন। সবচেয়ে কম বয়সী ডাবল সেঞ্চুরিয়ানও এখন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমানের বল পয়েন্টে ঠেলে দৌড়ে এক রান নিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন কিষাণ। এরপর তিনি দৌড়ে ছুটে যান ড্রেসিং রুমের দিকে। এর আগে সেঞ্চুরি করেও গিয়েছিলেন সেদিকে। সিরিজের আগের দু ম্যাচে বেঞ্চে বসে থাকা এই ক্রিকেটার সুযোগ পেয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারার আনন্দ তার উদযাপনে ছিল স্পষ্ট।
ঈষাণের অবিশ্বাস্য ইনিংসটির সমাপ্তি হয় তাসকিন আহমেদের বলে। লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৪ চার ও ১০ ছক্কায় ১৩১ বলে ২১০ রান করা কিষাণ। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। ভিরাট কোহলি সঙ্গে তার ২৯০ রানের জুটি যেকোনো উইকেটে যেকোনো দলের হয়েই বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ।
কিষাণের আলোতে ঢাকা পড়ে যাওয়া ভিরাট কোহলিও হাঁকান সেঞ্চুরি। লিটনের কাছ থেকে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগান দারুণভাবে। ১১ চার ও ২ ছক্কায় ৯১ বলে ১১৩ রানের ইনিংসটি থামে সাকিব আল হাসানের বলে। এর বাইরে ২৭ বলে ওয়াশিংটন সুন্দর ৩৭ ও ১৭ বলে ২০ রান করেন অক্ষর প্যাটেল।
৮ উইকেট হারিয়ে ৪০৯ রানে থামে ভারতের ইনিংস। বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন আহমেদ ৯ ওভারে ৮৯ রান দিয়ে নেন দুই উইকেট। ১০ ওভারে ৭৬ রান দিয়ে সাকিব ও ৯ ওভারে ৮০ রান দিয়ে ২ উইকেট করে নেন এবাদত হোসেন। এছাড়া ১০ ওভারে ৬৬ রান খরচ করে ১ উইকেট পান মোস্তাফিজও।
জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটারদের তেমন কিছুই করার ছিল না। তবে এমন রান পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে কেউ ব্যক্তিগত বড় ইনিংস খেলতেও ব্যর্থ হয়েছেন। দুয়েকজন শুরু পেয়েও নিজের রানকে লম্বা করতে পারেননি। শেষে সঙ্গী হয়েছে বড় হার।
পঞ্চম ওভারেই এনামুল হক বিজয় ফেরেন সাজঘরে। অক্ষর প্যাটেল বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই তুলে নেন তার উইকেট। লং অফে দাঁড়ানো মোহাম্মদ সিরাজের হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে ৭ বলে করেন ৮ রান। লিটন দাস খেলছিলেন মুগ্ধ করার মতো কিছু শট। কিন্তু তাকেও থামতে হয়েছে অল্পতেই। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ২৬ বলে ২৯ রান করে মোহাম্মদ সিরাজের বলে শার্দুল ঠাকুরের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।
সাকিব আল হাসান শুরুর দিকে কিছুটা ভুগছিলেন। কিন্তু পরে মনে হচ্ছিল ভালো একটা ইনিংস আসতে পারে তার ব্যাট থেকে। কিন্তু ৪ চারে ৫০ বলে ৪৩ রান করে আউট হয়ে যান তিনিও। এই রান করেই দলের পক্ষে সর্বোচ্চ সংগ্রাহক হয়ে থেকেছেন তিনি। ভারতের পক্ষে ৫ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন শার্দুল ঠাকুর। দুই উইকেট করে পেয়েছেন অক্ষর প্যাটেল ও উমরান মালিক।