দেশের মানুষ প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে সহনশীলতা দেখতে চায়। কিন্তু তাদের হতাশ হতে হচ্ছে। আমাদের দেশে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ন্যূনতম সহনশীলতাও দেখা যায় না। দুই দলের নেতারা পরস্পরের প্রতি আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলেন।
পাল্টাপাল্টি কথা বলাটাই যেন এখন রাজনীতির ভাষা হয়ে গেছে। আমরা জানি, গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশ ছাড়া কোনো দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক প্রতিটি দেশেই নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে নির্বাচন হয়। নির্বাচনে যাঁরা জেতেন, পরের মেয়াদে তাঁরা দেশের ক্ষমতায় থাকেন। ক্ষমতাসীন দল হেরে গেলেও পরাজয় মেনে নেয়। এমনকি বিজয়ী দলকে তারা অভিনন্দনও জানায়। আর আমাদের দেশে কী হয়? নব্বইয়ের পর কোনো একটি নির্বাচনও কি পরাজিত দল মেনে নিয়েছে? উল্টো সত্য-মিথ্যা নানা রকম অভিযোগ তুলেছে। নির্বাচনের পর থেকেই বিজয়ী দলকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানোর প্রাণান্তকর চেষ্টায় নামে। হরতালসহ বিভিন্ন রকম ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করে। জনজীবনে সীমাহীন দুর্ভোগ সৃষ্টি করে।
আর এক বছর পর একটি জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই রাজনীতির মাঠ গরম হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে আগামী ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের বাগযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। উত্তাপ বাড়ছে রাজনীতির মাঠে। এই পরিস্থিতি সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি বিভিন্ন বিভাগে সমাবেশ করছে। আর আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
অতীতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক উত্তাপ যখন তীব্র হয় তখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে জঙ্গিবাদ। এবারও যে তার ব্যতিক্রম হবে না, সে আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। রাজনীতির মাঠে যখন প্রধান দুই রাজনৈতিক দল উত্তাপ ছড়াচ্ছে, সেই অবসরে বাংলাদেশে নতুন করে জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে হিজরতের নামে বেশ কিছু তরুণের নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনায় জঙ্গিবাদের বিষয়টি সামনে এসেছে। গত ২০ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর এটা স্পষ্ট হয়েছে যে জঙ্গিরা অনেক বেশি সংগঠিত এবং নতুন করে তারা দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা তৈরি করতে যাচ্ছে। ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার দুজন জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থের জোগানদাতা অন্তত ২০ জন ধর্মীয় রাজনৈতিক নেতা।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে। অগ্রগতির এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি জঙ্গি দমনের কোনো বিকল্প নেই। জঙ্গিবাদের বিস্তারের নেপথ্যে অর্থের জোগান একটি বড় বিষয় হিসেবে কাজ করছে। অর্থায়নের উৎস বন্ধ করা গেলে জঙ্গি তৎপরতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। আমরা চাই, দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করুক। কোনো অবস্থায়ই জঙ্গিবাদ যেন সুযোগ না পায়।