কাজিরবাজার ডেস্ক :
কামরুন্নাহার সুরভী। জন্ম ১৯৯৫ সালের ২৮ জুলাই। তার নাগরিকত্ব পরিত্যাগের আবেদন মঞ্জুর করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে লতা রায় নামের আরও একজনের নাগরিকত্ব পরিত্যাগের আবেদন করে মন্ত্রণালয়। তার জন্ম ১৯৮৮ সালের ১০ মে। তারা দু’জনই নেপালের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। গত ২৭ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপ সচিব আলীমুন রাজীব স্বাক্ষরিত পত্রে নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে, আবেদনকারীদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পরিত্যাগের আবেদন সরকার মঞ্জুর করেছে। তাদের নাগরিকত্ব পরিত্যাগের অনুমোদন পত্রটি হস্তান্তরের আগে মূল পাসপোর্টটি গ্রহণ করে সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।
এদিকে হংকংয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৪ নভেম্বরের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী সালমিনা আজমির নাগরিকত্ব পরিত্যাগের আবেদনটি সরকার মঞ্জুর করেছেন। তিনি হংকংয়ের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। একই তারিখে আরও তিনজনের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ ও সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে সেখানকার বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে।
১৬ নভেম্বর লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে চিঠি দিয়ে মাসুদুর রহমান নামের একজনের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ ও ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণের বিষয়টি জানানো হয়। ৩ নভেম্বর আরমান খাঁ নামের একজন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করে বতসোয়ানার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন বলে চিঠি দেওয়া হয় সাউথ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে। মোহাম্মদ আতাউর রহমান ও ফরিদ আক্তার নামের দু’জন ইউক্রেন ও লিথুয়ানিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন বলে ২ নভেম্বর চিঠি দেওয়া হয় ওয়ারশ ও পোলান্ডের হাইকমিশনারকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১ জানুয়ারি (২০২২) থেকে গত ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন ৪০১ জন। এর আগের বছর ২০২১ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন ১৬৪ জন। ২০২০ সালে পরিত্যাগ করেছেন ২৯৭ জন। জার্মানি, হংকং, সিংগাপুর, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, কোরিয়া, ভারতে নাগরিকত্ব গ্রহণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন এবং অর্থনীতিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের শিকার শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনের মতো দেশও রয়েছে নাগরিকত্ব নেওয়ার তালিকায়।
মাতৃভূমির নাগরিকত্ব ত্যাগ করে অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করছেন। প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়ছে। আবার অনেকেই নিজ দেশের নাগরিকত্ব রেখেই অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করছেন। যা দ্বৈত নাগরিকত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়। নানা কারণেই নিজ দেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করে করে অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে এ বিষয়ে তারা বিস্তারিত কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কীভাবে নাগরিকত্ব ছাড়া যায়
দেশে অবস্থান করে কিংবা যে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করা হয়, সে দেশে থেকেই নাগরিকত্ব পরিত্যাগের আবেদন করা যায় সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস কিংবা হাইকমিশনে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকার নাগরিকত্ব পরিত্যাগের বিষয়টি মঞ্জুর করে থাকে বলে জানান তারা।
দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগে আবেদন করতে হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নাগরিকত্ব আইন, বিধি ও পরিপত্র অনুসরণে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই শেষে দ্বৈত নাগরিত্বের সনদ ইস্যু কিংবা আবেদন বাতিল করা হয়।
বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিধান অনুযায়ী সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি এবং মিয়ানমারসহ কয়েকটি দেশের নাগরিকরা দ্বৈত নাগরিকত্ব পাবেন না। এছাড়া সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদেরও দ্বৈত নাগরিকত্ব না দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাবনা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে নাগরিকত্ব পরিত্যাগের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য নয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নাগরিকত্ব ছাড়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাস, হাইকমিশন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনলাইন কিংবা সরাসরি আবেদন করতে হয়। সঙ্গে দূতাবাস কিংবা হাইকমিশনের সুপারিশপত্র ও পাঁচ হাজার টাকার ট্রেজারি চালানের কপি ও পাসপোর্টের মুলকপি জমা দিতে হয়। এরপর নাগরিকত্ব আইন , বিধি ও পরিপত্র অনুসরণে নাগরিকত্ব পরিত্যাগের অনুমোদনপত্র ইস্যু করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কেন নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়া হয়
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. খায়রুল আলম শেখ বলেন, বিভিন্ন কারণেই মানুষ নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করে। কোনও কোনও দেশের নাগরিকত্ব পেতে চাইলে তখন নিজ দেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে হয়। এটা সংশ্লিষ্ট দেশের শর্ত থাকে। সেকারণেও অনেকে নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেন। আবার ওই দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার পর অনেকেই নিজ দেশের নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার আবেদন করেন। তখন তাকে আবার বাংলাদেশের আইনানুযায়ী নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। তখন তিনি দ্বৈত নাগরিক হয়ে যান।