২৫ হাজার টাকার জন্য সাধারণ কৃষকদের কোমরে দড়ি অথচ লক্ষ-কোটির জন্য কিছুই হয় না – আপিল বিভাগ

17

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পাবনার ১২ জন কৃষককে ২৫ হাজার টাকা ঋণের টাকা আদায়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। তিনি আদালতে শুনানির সময় সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘২৫ হাজার টাকার জন্য সাধারণ কৃষকদেরকোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যেতে পারেন, অথচ যাদের কাছে লক্ষ-কোটি টাকা পাওনা, তাদের কিছু হয় না’
ঋণ আদায়ে ব্যাংকের চেক প্রতারণার মামলায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে হাই কোর্টে এক রায় স্থগিতে করা আবেদনের শুনানিতে সোমবার ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বিচারপতি এ উষ্মা প্রকাশ করেন।
ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না এমন নির্দেশনা দিয়ে গত ২৩ নভেম্বর রায় দেয় বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে বলা হয়, ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করা যাবে।
এ রায়ের পাঁচ দিনের মাথায় রায়টি স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করে ব্র্যাক ব্যাংক। সোমবার চেম্বার আদালতে সেটি শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন এ এম আমিন উদ্দিন। বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল্লা আল বাকী।
পাবনায় ঈশ্বরদী উপজেলায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ খেলাপির মামলায় সম্প্রতি কারাগারে পাঠানো হয়েছিল ১২ জন কৃষককে। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে ওই ১২ জনসহ পরোয়ানাভুক্ত ৩৭ কৃষককে রবিবার জামিন দেয় পাবনার আদালত।
চেক প্রতারণার অভিযোগে ব্র্যাক ব্যাংকের করা এক মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর দণ্ড বাতিলও করে হাই কোর্ট।
শুনানির শুরুতে ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, “এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাই কোর্ট রায় দিয়ে বলেছেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারবে না। নিম্ন আদালতে এ সংক্রান্ত বিচারাধীন সব মামরায় স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।” তখন চেম্বার বিচারপতি বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় না দেখে এ বিষয়ে আপাতত কিছু বলা যাবে না।
চেম্বার বিচারপতি এসময় ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, “২৫ হাজার টাকার জন্য সাধারণ কৃষকদের কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অথচ যাদের কাছে লক্ষ-কোটি টাকা পাওনা, তাদের কিছু হয় না।”
ঋণ দেওয়ার সময় গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া চেক সম্পর্কে বিচারক বলেন, “এই চেকে কে স্বাক্ষর করে, কে টাকার অঙ্ক বসায়, কে কলাম পূরণ করে, তার কোনো হদিস নেই। এই চেক নেওয়া যাবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তার পরেও ব্যাংকগুলো কেন মানছে না?”
পরে আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আগামী ১ ডিসেম্বর শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন চেম্বার বিচারপতি।