কাজিরবাজার ডেস্ক :
আওয়ামী লীগসহ ১৬টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত পূরণে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চিঠির জবাব দেয়নি। এছাড়া বিএনপিসহ চারটি দল সময় চেয়ে আবেদন করেছে।
নিবন্ধন শর্তাদি প্রতিপালন হচ্ছে কিনা তা জানাতে সম্প্রতি নিবন্ধিত ৩৯ দলকে চিঠি দেয় ইসি। চিঠিতে ২৪ নভেম্বর মধ্যে দলগুলোর কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ে কার্যালয়, নির্বাচিত কমিটি ও সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হচ্ছে কিনা এসব হালনাগাদ তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছিল।
ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) শেষ দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ ১৬টি দল চিঠির কোনো জবাব দেয়নি। বিএনপি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও বাংলাদেশ কংগ্রেস তিন মাস সময় চেয়েছে। এছাড়া ন্যাশনাল পিপলস পার্টিও সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আব্দুল হালিম খান বলেন, ২৩টির মতো দলের জবাব পেয়েছি। কয়েকটি দল সময় চেয়ে আবেদন করেছে। প্রাপ্তি ও জারি শাখায় আরও কোনো দল জমা দিয়েছে কিনা জানা যায়নি।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। কমিশন চাইলে সময় বাড়াতে পারে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, বিষয়টি আমাদের কাছে এখনও উত্থাপন করেনি ইসি সচিবালয়। সময় বাড়ানোর বিষয়েও আলাপ হয়নি। তাই কিছুই বলতে পারবো না।
শর্ত পূরণ করতে না পারলে কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখি আগে তারা কী পরিমাণ শর্ত পূরণ করতে পারে।
শর্ত পূরণ করতে না পারলে কঠোর হবেন কিনা, বা নিবন্ধন বাতিল হবে কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে সাবেক ইসি সচিব বলেন, নিবন্ধন বাতিলের মতো হলে হবে। না হলে হবে না। নিবন্ধন বাতিলের মতো অপরাধ করে থাকলে বাতিল হবে।
যে দলগুলো তথ্য দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন (বিটিএফ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামী এক্যজোট (আইওজে), খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, মুক্তিজোট, গণফোরাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি ও জাতীয় পার্টি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসব দল তথ্য দিয়েছে মাঠ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সেসব দলের দেওয়া তথ্যগুলোও যাচাই করা হবে। এরপর সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। এর আগেও যাচাইয়ের ভিত্তিতে কয়েকটি দলের নিবন্ধন বাতিলের ইতিহাস রয়েছে।
২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে আইন হলে ৪৪টি দল নিবন্ধন পায়। এরমধ্যে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়। ফলে বর্তমানে নিবন্ধিত দল রয়েছে ৩৯টি।
এর আগে স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন প্রথম বাতিল হয়।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আদালত অবৈধ ঘোষণা করে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আদালতে আপিল নিষ্পত্তির ভিত্তিতে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে ইসি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৮ সালে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ২০২০ সালে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি-পিডিপি ও ২০২১ সালে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার নিবন্ধন বাতিল করা হয়।
সে সময় কাজী ফারুকের ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন কমিশনকে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ফেরদৌস কোরেশীর দল পিডিপির কেন্দ্রীয় দপ্তর এবং জেলা ও উপজেলা দপ্তরের অস্তিত্ব ও কার্যকারিতা পায়নি কমিশন।
এছাড়া শফিউল আলম প্রধানের দল জাগপা এক তৃতীয়াংশ জেলা, ১০০ উপজেলা/থানায় দলীয় কার্যালয় ও ১০০টি উপজেলায় ২০০ জন ভোটার সদস্যও দেখাতে পারেনি।