সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনস্থলে দলের বিবদমান দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে আজমল হোসেন চৌধুরী ওরফে আরমান (৩৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি দিরাই পৌর শহরের হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম আবদুল হান্নান চৌধুরী। তাঁদের গ্রামের বাড়ি উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের কুলঞ্জ গ্রামে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ বলেছেন, ‘একজন মারা গেছেন বলে শুনেছি। আমরা তদন্ত করে দেখব, সেটি স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক মৃত্যু। যদি অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় আর এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পুলিশ, দলীয় নেতা-কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলন ঘিরে দুই দিন ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। শহরের বিএডিসি মাঠে সোমবার দুপুরে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে মঞ্চে ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ।
এ ছাড়া মঞ্চে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুল সামাদ আজাদ ডন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সহ-সভাপতি নোমন বখত পলিন, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন,
স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্ত, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার খানম-সহ কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তারা চেয়ারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আত্মরক্ষা করেন। বেলা দেড়টার দিকে সম্মেলনস্থলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া এবং উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রঞ্জন রায়ের নেতৃত্বে একটি মিছিল সেখানে যায়। মিছিলটি সমাবেশমঞ্চের কাছাকাছি গেলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি ও সংঘর্ষ শুরু হয়।
এ সময় দুই পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। অতিথিরা তখন মঞ্চে বসে ছিলেন। মঞ্চে থাকা কারও কারও ঢিলের আঘাত লেগেছে। সংঘর্ষ উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হন। আহতরা হলেন দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল হাসান চৌধুরী, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান সেন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা এবাদুর রহমান কুবাদ, পৌর কাউন্সিলর এবিএম মাসুম প্রদীপ প্রমুখ। আহতদের মধ্যে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪৫ জনের মতো চিকিৎসা নিয়েছেন। ঘণ্টাখানেক পর পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সময় পরে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সংঘর্ষের একঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের সম্মেলন শুরু হয়।
নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা জানান, সমাবেশস্থলে সংঘর্ষ চলাকালে আজমল হোসেন চৌধুরীর পিঠে ঢিলের আঘাত লাগে। এরপর তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে মানুষের ভিড়ে চিকিৎসা নিতে পারেননি। বাসায় আসার পর অস্থিরতা শুরু হলে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁকে আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।