১ ডিসেম্বর থেকে ক্রাশ প্রোগ্রাম ॥ লক্কড়ঝক্কড় বাস রাস্তায় নামলেই ডাম্পিং

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তায় আনা হচ্ছে কৌশলগত পরিবর্তন। আইন মেনে রাস্তায় গাড়ি চালানোর বিষয়ে আরও কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এ ছাড়া ১ ডিসেম্বর থেকে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানো হবে লক্কড়ঝক্কড় মার্কা বাস, মিনিবাসের বিরুদ্ধে। আর ১৫ ডিসেম্বর থেকে মূল লাইসেন্সছাড়া মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করা হচ্ছে। বিধিনিষেধে অনড় থাকছে সরকারি পুলের অকেজো গাড়ির রেজিস্ট্রেশনেও। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে বিআরটিএ সূত্র।
এ ছাড়া সড়ক নিরাপত্তায় আরও কিছু নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে আজকের বৈঠকে। মূলত, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো ও সড়ক দুর্ঘটনার হার কমানোর কৌশলগত উপায় বের করার জন্য সবার মতামতের ভিত্তিতে আজ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এই মন্ত্রণালয়ের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী জানিয়েছেনÑ সিদ্ধান্ত অনেক কিছুই হতে পারে। আলোচনাও হবে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো। অর্থাৎ সড়ক নিরাপত্তার স্বার্থে আরও কঠোর হতে হবে।
জানা গেছে, আজ জাতীয় সড়ক নিরাপত্তার ২৯ তম সভায় উপস্থিত থাকছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেতু ও যোগাযোগমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কমিটির ৪৫ সদস্যের সবাই। বিআরটিএ সদর দপ্তরে ডাকা এই বৈঠকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও জটিল সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, আজকের বৈঠকে আগামী ৩০ নভেম্বরের পর থেকে রাজপথে লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়ি চালানো, মূল লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন না দেওয়া, মহাসড়কে ইজিবাইক নিষিদ্ধ ও সরকারি অফিসের অকেজো গাড়ি ব্যবহার না করা ও রেজিস্ট্রেশন নবায়ন না করার মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের প্রতি আরও কঠোর মনোভাব পোষণ করা হতে পারে। এসব সিদ্ধান্ত আগে নেওয়া হলেও নানা মহলের তদ্বির ও সমন্বয়হীনতার দরুন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, আজকের বৈঠক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘায়িত করা হতে পারে ইস্যুভিত্তিক আলোচনা। এর মধ্যে প্রাধান্য পেতে পারে সাম্প্রতিককালের দুর্ঘটনাগুলো। এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ঘটছে ছোট আকারের যানবাহনের সঙ্গে। ফলে প্রাণহানিও বাড়ছে। বেসরকারি ও সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ছোট আকারের যানবাহনগুলো এখন দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সড়ক ও মহাসড়কে বেপরোয়া চলাচল ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এ ধরনের ছোট যানবাহন সাধারণত যাত্রীবোঝাই থাকে। অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় সবাই।
দেশে এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে ইজিবাইক থেকে শুরু করে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাসহ থ্রি হুইলার নেই। এর আগে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভায় সড়ক ও মহাসড়কে নন-মোটরাইজড যানবাহন চলবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যেমন নসিমন, করিমন, ভটভটি ও ইজিবাইক চলতে পারবে না। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গড়িমসি দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া ২২টি জাতীয় মহাসড়কে থ্রি হুইলার, অটোরিক্সা কিংবা টেম্পো চলতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শিথিলতা রয়েছে। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী নিজেই এ কথা সভায় স্বীকার করেছেন।
বিআরটিএ সূত্রমতে- জাতীয় নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের জন্য সম্প্রতি ২০২১-২৪ বছরের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে ২০১৭-২০ বছরের কর্মপরিকল্পনা মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আর এই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী নতুন করে কর্মপরিকল্পনা তৈরির নির্দেশনা দেন। এখানে দুর্ঘটনা কমানোর বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে থ্রি হুইলার, ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিক্সার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস কড়া ভাষায় মতামত দেন- ইজিবাইক রেজিস্ট্রেশনের আওতায় এনে ঢাকা শহরের মধ্যে চলাচলের অনুমতি দেওয়া কোনোভাবেই সমীচীন হবে না।
ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিক্সাকে এখনই ঢাকা শহর থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। ঢাকা শহরে পুলিশের টোকেন নিয়ে ইজিবাইক চলাচল করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। জানা গেছে- এমন মতামত থাকার পরও সড়ক বিভাগের সুপারিশ হচ্ছে- বিভাগীয় শহরে বা জেলা শহরের মধ্যে ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি দেওয়া যাবে না। এসব সিদ্ধান্ত আগেও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কার্যকর করা যায়নি। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে অনেকে সড়কে ছোট ছোট যানবাহন চলাচলের জন্য তদ্বির করেন।
এই তদ্বির না রাখলে সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তাকে নাজেহাল হতে হয়। এমনকি বদলির হুমকিও দেওয়া হয়ে থাকে। যে কারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক কর্মকর্তা এ কাজ থেকে অনেক সময় বিরত থাকেন। এই কাউন্সিল থেকে বিভিন্ন সময় সুপারিশমালা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু অনেক সময় সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
এদিকে আজকের বৈঠকে কঠোর অবস্থান নেয়া হবে লক্কড়ঝক্কড় মার্কা অসুন্দর বাসের বিরুদ্ধে। এ জন্য সাঁড়াশি অভিযানে নামবে বাংলাদেশ সডক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। রাজধানীতে চলাচল করা এসব যানবাহনকে এরই মধ্যে ত্রুটিমুক্ত করার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ নবেম্বরের মধ্যে সব বাস, মিনিবাস ত্রুটিমুক্ত করতে হবে। তারপর থেকেই রাজধানীতে যেখানেই দেখা মিলবে এ ধরনের গাড়ি, সেখানেই আটক করে নিয়ে যাওয়া হবে ডাম্পিংয়ে।
জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, প্রভাবশালী মহলের তদ্বির উপেক্ষা করেই এবার কঠোর ভূমিকা নেওয়া হবে। কারণ গণপরিবহনের সৌন্দর্যের ওপর নগরের সৌন্দর্য ও দেশের ভাবমূর্তি অনেকাংশে নির্ভর করে। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কিছু বাস, মিনিবাসের রংচটা, জরাজীর্ণ, জানালা-দরজার কাঁচ ভাঙ্গা, সামনে- পেছনের লাইট ভাঙ্গা। কোনো কোনো বাস থেকে কালো ধোঁয়াও নির্গত হয়। এ ছাড়া কিছু বাস, মিনিবাসে ভেতরে ফ্যান থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা ভাঙ্গা ও অচল দেখা যায়। সিটের কভারও অপরিষ্কার।
অস্বাস্থ্যকর ও ত্রুটিযুক্ত যানবাহনে যাত্রীদের চলাচলে নানাবিধ ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ধারা-২৫ অনুযায়ী ত্রুটিমুক্ত যানবাহন চলাচলে বাধ্যবাধকতা এবং এর ব্যত্যয়ে আইনের ধারা ৭৫ অনুযায়ী কারাদ- বা অর্থদ- বা উভয় দ-ের বিধান রয়েছে। এ অবস্থায়, আগামী ৩০ নভেম্বরের পর মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাস্তায় এ ধরনের যানবাহন দেখা গেলেই ডাম্পিং করা হবে।